বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামীতে বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে আবারও বিএনপি ফিরিয়ে আনবে।
“আমাদের পূর্বসূরিরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ আমাদের দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূল শক্তি ছিল- প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেষ পর্বে আজ বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিভাগে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেখেছি দলীয় সরকারে কিভাবে একটি দলের লোকজন বিচরণ করে সর্বত্র; আর অন্য সবার অবস্থান হয়ে পড়ে তুচ্ছ আর গৌণ। ফলে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়। ”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়। ”
তারেক রহমান আরও বলেন, “এদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন; তাঁরা সকলে আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাঁদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়। ”
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান- এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন; কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাঁদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসাবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাঁদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়। ”
তিনি বলেন, “আমি বিনয়ের সাথে শুধু আমাদের আগামীর পরিকল্পনা আর সদিচ্ছার কথা জানাতে পারি, কারণ আমরা জানি- দেশের মানুষের সমর্থনই কেবলমাত্র আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। ”
তারেক রহমান বলেন, “আশাকরি জনগণ নিশ্চয়ই সেই সব দল বা ব্যক্তিকে জাতীয় সরকারে সামিল দেখতে চাইবেন না; যারা পুরো দেশটাকে একটা দল আর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশে গড়েছে সম্পদের পাহাড়। গুম-খুন হামলা-মামলা নির্যাতনে দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, চাল ডাল লবণ তেল ঔষধের দাম মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। আইন বিচার নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। ”
তিনি বলেন, এমন কি পালিয়ে যাবার পূর্ব মুহূর্তেও শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলা; জনগণ নিশ্চয়ই সেই জালেমদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাইবেন না।
বিগত সতেরো বছরের বিরামহীন আন্দোলনে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য জনাব তারেক রহমান সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের পরিবর্তিত আশা আর ভাষার সাথে নিজেদের মানিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের উপযুক্ত হতে তিনি নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন।
তিনি সাম্প্রতিককালে গজিয়ে ওঠা অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
সবশেষে তৃণমূলের প্রতি অগাধ আস্থা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দলের সকল সংকটকালে তৃণমূলই বিএনপিকে বার বার রক্ষা করেছে। এমপি মন্ত্রী পদ পদবীর প্রত্যাশা না করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদল যারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর বিএনপি র আদর্শের প্রতি যে অবিচল আস্থা বরাবর রেখেছেন সেটা অব্যাহত থাকলে দল হিসাবে বিএনপির সফলতা আর অগ্রযাত্রা কখনোই ব্যহত হবে না।
news24bd.tv/কেআই