ভারতে পালানোর সময় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু

ভারতে পালানোর সময় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির (শা-পা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না (৬০) ভারতে পালানোর সময় মারা গেছেন বলে জানা গেছে। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, পালিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় তার মৃত্যু হয়েছে নাকি অন্য কোনোভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) ভোরে ভারতে পালানোর সময় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ধাওয়া খেয়ে তার মৃত্যু হয় বলে প্রথম খবরে জানা যায়।

পরে জানা গেছে, মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে ওঠার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। শুক্রবার রাত ১২টায় মেঘালয় সীমান্তের ওপাড়ে একটি পাহাড়ে উঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পান্না।

এও জানা গেছে, পান্না ভারতের পালিয়ে যেতে একটি পাহাড়ে উঠছিলেন।

এ সময় তাকে গুলি করা হয়। এতে তার মৃত্যু হয়।  

বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে পান্নাকে মৃত অবস্থায় দেখা গেছে। তার পরনে কলো রঙের টি-শাট ও রঙের প্যান্ট। বাঁ পায়ের গোড়ালির দিকে রক্ত দেখা যাচ্ছে।  

অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার ভোর ৪টার দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন পান্না। সকাল ৬টার দিকে ডাউকি এলাকায় পৌঁছলে বিএসএফ তাকে ধাওয়া করে। এতে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বিএসএফ গুলি ছুড়লে ভয়ে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পান্নার মৃত্যু হয়েছে।  

যে কারণে ঘটনাটি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

পান্নার আত্মীয় জসিম উদ্দিন খান জানান, তিনদিন আগে পান্নার সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে। ২৫ জুলাই তিনি পিরোজপুর শহরের বাড়িতে এসে দু-দিন পর ফিরে যান।

জসিম বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পান্না। ওপারেই তার মৃত্যু হয়। সেটা গুলি নাকি স্টোকজনিত কারণে সেটা নিশ্চিত হতে পারিনি।

সীমান্তের ভারত প্রান্তের একটি থানায় তার মরদেহ রয়েছে বলে জানান পান্নার ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েকুজ্জমান মিন্টু।

এ মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি বিএসএফও এ নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। যে কারণে, পান্নার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।   

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। সেদিনই তার পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পিরোজপুরের পৈত্রিক নিবাসে পৃথক দ্বিতল ভবন করেছিলেন পান্না, সেখানেই এই ভাঙচুর চলে। তার এক ভাই ওই বাড়িতে থাকলেও সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াত তেমন নেই।  

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ১৯৯৪ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পান্না। ওই সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাধিকবার এমপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের উপমন্ত্রী হলেও পান্না বরাবরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বাইরে ছিলেন। তবে ২০১২ সালের সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। অবশ্য পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাকে। পেশাগত জীবনে বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।

news24bd.tv/DHL