রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি

রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি

অনলাইন ডেস্ক

রাতের আঁধারে ধ্বংস করা হয়েছে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বাড়িটি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ ও সচেতন নাগরিকরা ক্ষুব্ধ। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার (১৫ আগস্ট) মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  

রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে শৈশব থেকে তারুণ্যের একটি পর্ব কাটিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটক।

তার স্মৃতিঘেরা বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ চলছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে গত ৬ ও ৭ আগস্ট তা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

মিয়াপাড়ার বাড়িতে থাকার সময় তরুণ ঋত্বিক ঘটক তখনকার রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার পরিবার কলকাতা চলে যায়।

১৯৮৯ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার ঋত্বিক ঘটকদের বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজকে ইজারা দিয়েছিলো। এরপর জায়গাটির উত্তরে গড়ে তোলা হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের আধুনিক ভবন। এ ভবনের দক্ষিণে খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকারের স্মৃতিবিজড়িত পুরনো বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো।

সংস্কৃতিকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান পুরনো স্থাপনাগুলো রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলেছেন।

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানিয়েছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আগেও বাড়িটি ভেঙে ওই জমি অন্য কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা এতে বারবার বাধা দিয়ে এসেছেন। ২০২০ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য বাড়িটি ভেঙে ফেলছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সংগঠনগুলো মানববন্ধন করে। বিবৃতি দেন চলচ্চিত্রকাররা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করে। সেই কমিটির সদস্যরা বাড়িটি পরিদর্শন করে ঋত্বিক ঘটকের পরিবারের ব্যবহৃত বাড়ির অক্ষত অংশ এবং একটি কুয়া চিহ্নিত করেন। জেলা প্রশাসন পুরনো বাড়িটি আগের সেই অবস্থায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

বাড়িটি ভেঙে ফেলার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল দুপুরে রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা সংরক্ষণের সরকারি সিদ্ধান্তসংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে সেখানে যান। এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে হট্টগোল শুরু হয়। কলেজ থেকে সংস্কৃতিকর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে যান। এর আগে তারা সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ এটি ভেঙে থাকলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান এক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৬ আগস্ট কিছু ছাত্র এসে প্রথমে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেন। তাদের কয়েকজনকে তিনি চেনেন। পরিচয় জানতে চাইলে ভবন ভাঙতে থাকা কয়েকজন তাকে বলেন তারা শ্রমিক। কিছু ছেলে তাদের টাকা দিয়েছে এটা ভেঙে ফেলার জন্য। জায়গাটি নিয়ে কলেজের পরিকল্পনা থাকলেও বাড়িটি নিজেরা ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ।  

সংস্কৃতিকর্মী আন্নাবা কবির প্রকৃতি অধ্যক্ষের কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অধ্যক্ষ এখন ছাত্রদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। ছাত্ররা ভাঙলে কলেজের নতুন ভবনেও ভাঙচুর চালাতেন। সেখানকার একটি জানালার কাচও ভাঙেনি। ’

জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ বলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে ফেলার কথা শুনলাম। সংস্কৃতিকর্মীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। যারাই এই বাড়ি ভাঙুক, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়িটির যা অবশিষ্ট আছে, তা সংরক্ষণ করা হবে। ’

news24bd.tv/SC