চাকরি ছেড়ে দেশীয় মাছের ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে ভাগ্য বদলিয়েছে নওগাঁর বদলগাছীর পিয়াল হোসেন নামে এক যুবক। শুরুতে একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। আর সেই ব্যবসা থেকে এখন বছরে আয় করছেন কোটি টাকা। শুধু নিজের ভাগ্য বদলই নয়, সেখানে সৃষ্টি করেছেন অনেকের কর্মসংস্থানও।
পিয়াল জানায়, নওগাঁ সরকারী কলেজে থেকে বিএ পাশ করে বগুড়া ফিসারীতে কেমিস্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। দু-বছর চাকরি করার পর কোন উন্নতি দেখতে না পেয়ে পরিবারের পরামর্শে চাকরি ছেড়ে এক এনজিও থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে যখন শুরু করেন দেশীয় মাছের হ্যাচারি খামার। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার রেনু-পোনা মাছ বেচাকেনা হয়। এতে করে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ লাভ হয় সব খরচ বাদ দিয়ে। পাশাপাশি ১০-১২জনের কর্মসংস্থানও হয়েছে আমার এই হ্যাচারিতে। তার এই হ্যাচারির রেণু পোনার মান ভালো হওয়ায় সারাদেশ থেকেই মাছ চাষিরা রেণু নিতে আসেন। সবকিছু বাদ দিয়ে বছরে আয় থাকে এক থেকে দেড় কোটি টাকা আয় হয়। শুরুতে অনেকে অনেক কটু কথা বললেও এখন তার এই সাফল্য দেখে খুশি স্থানীয়রা।
পিয়াল বলেন, প্রথমে মাছের শরীরে ইনজেকশন দিয়ে হরমোন পোস্ট করা হয়। এরপর হাপাতে রাখা হয়। হাপা থেকে বাচ্চা নিচে পড়ে গেলে তারপর সেগুলো চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মৎস্য চাষীদের কাছে বিক্রি করেন। যেসব বেকার, শিক্ষিত যুবক দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন করতে আগ্রহী তাদেরকে তিনি হ্যাচারি স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করবেন বিনি টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, জয়পুরহাট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসয়ীরা। পিয়াল ভাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই হ্যাচারি থেকে ভাগ্য বদল করেছে। তাকে লক্ষ্য করে কেউ সামনের দিনে তারা এই ধরনের কাজ করেন তাহলে নিজেদের অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সুযোগ হবে। তরুন উদ্যক্তা কালাম বলেন, তিনি ১৬ বছর দেশের বাহিরে ছিলেন। এখন দেশে এসে মাছ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি পিয়ালের কথা অনেক শুনেছেন। তাই তার দেখাদেখি মাছ চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ভ হয়েছেন। তিনি মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পুকুরে দেয়ার জন্য। তার মতো আরো অনেক ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেক জায়গা থেকে দেশীয় মাছের রেনু সংগ্রহ করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই পিয়ালের কাছ থেকে বেশ কয়েকবার দেশীয় মাছের রেনু নিয়ে গিয়ে খুব ভালো ফলাফল পেয়েছি। তাই আবারো রেনু নেয়ার জন্য এখানে এসেছি।
মৌসুমীর মৎস্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার বলেন, পিয়ালের কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে থাকি। নওগাঁ জেলায় আর কোথাও দেশীয় মাছের রেনু পাওয়া যায় না। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান বলেন, তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে জেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
news24bd.tv/কেআই