রিমাল আতঙ্কে উপকূলে ‘বাঁধ’ নিয়ে শঙ্কা

৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। ছবি: সংগৃহীত

রিমাল আতঙ্কে উপকূলে ‘বাঁধ’ নিয়ে শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হতে পারে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে রোববার সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানায়, উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে মোট দুই হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।

পাউবোর কর্মকর্তাদের দাবি, উপকূলীয় ওই তিন জেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।

এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। সেখানে ৫৬০টি গবাদি পশুও রাখা যাবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন।

এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়রা উপজেলাটির সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালি এলাকায় ১ কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় ৬০০ মিটার, ২ নম্বর কয়রা এলাকায় ৫০০ মিটার, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি-দশহালিয়া এলাকায় ২ কিলোমিটার, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে শাকবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল, তেঁতুলতলার চর ও চৌকুনি এলাকায় ৩ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

এ সব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি বাড়লে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পাউবোর খুলনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন জানান, তারা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। কিন্তু তা অনুমোদন হতে সময় লাগে।

মশিউল বলেন, কয়রার উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে বাঁধ নির্মাণসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এ প্রকল্প শেষ হলে ৩২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত হবে।

পাউবোর এই কর্মকর্তা বলেন, “দুর্যোগে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমাদের প্রস্তুতি আছে। তবে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সমস্যা হবে না। ”

তবে এলাকাবাসী বলছেন, বাঁধ নির্মাণের এ কাজে বালু সরবরাহের জন্য স্থানীয় ড্রেজার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ড্রেজার মালিকরা বাঁধের পাশের শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু তুলছেন। অব্যাহত বালু তোলায় সুন্দরবনে ভাঙন যেমন বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে নির্মাণাধীন বাঁধও।

news24bd.tv/DHL