ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ। তবে মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজটের চিহ্ন নেই। ফলে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারছেন।
ঢাকা-টাংগাইল মহাসড়ক পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহ নেই পথচারিদের।
প্রতিনিয়ত ব্যস্ততম মহাসড়ক দিয়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে, ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার আইল্যান্ড টপকে, সুযোগ বুঝে দ্রুত গতির যানবাহনের সামনে দিয়েই দৌড়ে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। অনেকেই আবার হাতের ইশারায় চলমান গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে।ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রতিদিন হাজারো গাড়ী প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেগে চলাচল করে।
ঢাকা-টাংগাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিকটতম এক আত্মীয়কে দেখতে আসেন পারুল আক্তার। তিনি রোগী দেখে বাড়িতে ফেরার পথেই একটি ফুটওভার ব্রিজ থাকলে সেটি ব্যবহার না করে নিচ দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হোন। এতো কষ্ট করে আসার কী দরকার ছিল? ফুটওভার ব্রিজ কেন ব্যবহার করলেন না? জানতে চাইলে মধ্যবয়সী এই নারী বললেন, আমার পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা। এভাবে চলতে গেলে তো ঝুঁকি থাকে। সেটা দেখতেও তো ভালো লাগে না- এমন মন্তব্যের জবাবে পারুল বলেন, শুনেছি রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় ফুট ওভার ব্রিজেই নাকি চলন্ত সিড়ি রয়েছে। এখানেও সেটা হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।
এদিকে ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কের অনেক জায়গায় ওভারব্রিজ দূরে থাকায় পথচারীরা নিচ দিয়ে পার হয়। মহাসড়কের গাজীপুর চন্দ্রা বাসষ্ট্যান্ডে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপার না হয়ে ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে পার হচ্ছে। কয়েকজন পথচারী বলেন, রোজা রেখে ব্রিজে উঠতে মন চায় না। নিচ দিয়েই ভালো। এক মিনিটেই পার হওয়া যায়। দ্রুত নিচ দিয়ে যাতায়াত করা যায়। ব্রিজ দিয়ে যেতে সময় অনেক লাগবে তাই নিচের ফাকঁ দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে কেন নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অপর এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিচ দিয়ে আসলাম এইটা দেখলেন, কিন্তু বাস চালক আমাদের মহাসড়কে মাঝখানে নামিয়ে দিল তা দেখলেন না। আমাকে যদি সঠিক জায়গায় নামানো হতো তাহলে আমি ব্রিজ দিয়েই আসতাম।
এছাড়াও পথচারীদের অভিযোগ, দিনের বেলায় প্রচন্ড রোদের তাপের কারণে অনেকে এইসব ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করে না। আবার ফুটওভার ব্রিজে লাইটের কোন ব্যবস্থা না থাকায়। এইসব ফুটওভার ব্রিজগুলো রাতের বেলা ভবঘুরে, মাদকাসক্তদের দখলে থাকে। এছাড়া রাতে ছিনতাইকারীদের ভয়ে অনেকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চান না বলে অনেকেই জানান।
স্থানীয় এক কলেজের ছাত্রী বলেন, পড়াশোনা করার কারনে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক পার হয়ে আমাকে কলেজে যেতে হয়। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয় আমাকে। কিন্তু মহাসড়কের ওপর যে ফুটওভার ব্রিজটি রয়েছে সেটাতে প্রায়ই সময় কিছু বখাটে ছেলে আড্ডা মারতে দেখা যায়।
ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পার হচ্ছেন একজন। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে পার হচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের বাড়ী যাব। সময়ের স্বল্পতার কারণে নিচ দিয়ে আসা। সময়ের মূল্য বেশি নাকি জীবনের মূল্য বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনের মূল্য বেশি জেনে শুনে এমনটি করেছি, আর করবো না।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুটওভার ব্রিজের যে উচ্চতা থাকা প্রয়োজন মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজগুলোর উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো পথচারীরা ব্যবহারে উৎসাহ পান না।
এ বিষয়ে গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণ যে পরিমাণ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার কথা, সে পরিমাণ ব্যবহার করছেন না। ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাড়িয়ে জোরপূর্বক যাত্রীদের ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য করা প্রতিদিনের কাজ। তারপরও জনগনকে সচেতন করতে চেষ্ঠা করছেন বলে জানান এই পুলিশ সুপার।
news24bd.tv/DHL