রাজধানীর জিগাতলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় তাদের চারজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে আর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে কিছু শিক্ষার্থী দাবি করেন। তবে এটি গুজব বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
সংঘর্ষ থেমে গেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে তাদের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
এদিকে 'মৃত্যু ও ধর্ষণের গুজব' সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন সকাল থেকেই ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও এর আশপাশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে আন্দোলনরত কিছু ছাত্রছাত্রী গাড়ির কাগজপত্র চেক করছিলেন। সকালের দিকে আওয়ামী লীগের এক নেতার গাড়িচালকের লাইসেন্স ও কাগজপত্র চেক করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। বেলা একটার দিকে গুজব ছড়ায়, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গেছেন। এমন খবর পেয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শিক্ষার্থীরা সীমান্ত স্কয়ারের দিকে রওনা হয়। সেখানে পৌঁছালে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিক থেকে মাথায় হেলমেট পরে, হাতে লাঠি নিয়ে বিভিন্ন বয়সের লোকজন শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় কয়েক দফা ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায় বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানমন্ডিতে সংঘর্ষের সময় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হামলাকারীদের মধ্য থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে দুই ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তাদের একজনের পরনে ছিল ফুলতোলা লাল শার্ট, অন্যজনের পরনে সবুজ রঙের পাঞ্জাবি।
হামলাকারীরা একপর্যায়ে সাংবাদিকদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় ও ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। তাদের হামলায় কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিক আহত হন।
শিক্ষার্থীরাও গাছের ডাল, ইটপাটকেল নিয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে হামলাকারীদের জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের দিকে সরে যায়। পরে লাঠিসোঁটা, রড, রামদা নিয়ে ছাত্রদের ফের ধাওয়া দেয় এবং সীমান্ত স্কয়ারের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তাতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থী অবস্থানে। লাঠি-সোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০-২৫ জন আহত হয়। এরমধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন চোখে বড় ধরনের আঘাত পেয়েছেন। পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্রীও আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন আহতের খবরও পাওয়া গেছে। আহতদের রাজধানীর পপুলার, জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, তোমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একমত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তোমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হতে একটু সময় প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং প্রজ্ঞাপন জারি চাই।