শিশুর কিডনি রোগ : প্রতিকার ও প্রতিরোধ

বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও কিডনি রোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে বছরে অর্ধলাখের বেশি শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করে উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।

কারণ সংক্রামক ও অসংক্রামক উভয় কারণ ছাড়াও নানা কারণে কিডনি রোগে ভুগে থাকে শিশুরা।  এমন কিছু কারণ হলো— ♦ অপরিণত বা অল্প ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের কিডনির নেফ্রোন বা ছাঁকনির সংখ্যা কম থাকে। ফলে সঠিকভাবে কিডনির কার্যক্রম চালাতে পারে না। এতে পরবর্তী পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ♦ জন্মগত কিডনির ত্রুটি বা মাতৃগর্ভেই শিশুর কিডনিজনিত জটিলতা হতে পারে।  অনেক শিশু একটি কিডনি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। ♦ নেফ্রোটিক সিনড্রোম বা প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া। ♦ টনসিল, খোসপাঁচড়া হলে এবং সময়মতো চিকিৎসা না করালে অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের আশঙ্কা বাড়ে। ♦ ডায়রিয়া, বমি, রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি বা হঠাৎ কিডনি বিকল হতে পারে। ♦ গর্ভবতী মায়ের আমিষ ও আয়রন কম গ্রহণ এবং ভিটামিনের অভাব পরিলক্ষিত হলে। ♦ শিশুর স্থূলতা বা বেশি ওজন থাকলেও কিডনি রোগের আশঙ্কা বাড়ে। ♦ অবস্ট্রাক্টিভ ইউরোপ্যাথি হলে শিশুরা ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব করে। এতে কিডনিতে সংক্রমণ হয় এবং ক্রমান্বয়ে কিডনি বিকল হয়। ♦ শিশুদের কিডনিতে সাধারণত সিস্টিক বা অবজালেট পাথর হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ♦ বংশগত কারণেও বা পরিবারের কারো কিডনি রোগ থাকলে শিশুটিরও কিডনি রোগ হতে পারে।

উপসর্গ ♦ প্রস্রাবের স্বাভাবিক পরিমাণ কমে যাওয়া এবং চা ও কফির রঙের মতো প্রস্রাব হওয়া। ♦ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ♦ মুখ, চোখের পাতার নিচে ফোলা ফোলা ভাব। ♦ পায়ে ও পেটে পানি আসা। ♦ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া অথবা হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া। ♦ রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়া।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ♦ প্রস্রাব পরীক্ষা করা। ♦ রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা। ♦ প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা প্রোটিন নির্ণয়। ♦ কিডনির ছাঁকনির কার্যকারিতা পরীক্ষা। ♦ আলট্রাসনোগ্রাম করে কিডনির পরিধি ও আকার পরিবর্তন নির্ণয় করা। ♦ কিডনি বায়োপসি করা।   চিকিৎসা প্রথম পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে শিশুদের কিডনি রোগ পুরোপুরি সেরে যেতে পারে। জন্মগত জটিলতাগুলো সারিয়ে তোলা যায় শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে। আর সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ যেমন—ডায়রিয়া, মশার কামড়ে কিডনি রোগ, টনসিল ও খোসপাঁচড়ার মাধ্যমে কিডনি রোগ হলে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখক : ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগ বিভাগের সাবেক প্রধান।

বিভাগীয় প্রধান, পিআইসিইউ, আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল।