গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় এ পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলার বর্ববরতা বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশটির বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তারা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ছাত্রদের এই ন্যায্য আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তারা ১০০-র বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। অথচ ২০১৮ সালে এই যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
ওই বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ও স্কুলের শিশুদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত সপ্তাহের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সারা দেশের মানুষের ভাবনার প্রতিচ্ছবি। যদিও আমরা বাস বা অন্যান্য যানবাহনসহ সম্পত্তি ধ্বংসকে সমর্থন করি না, তবে দেশটির হাজার হাজার তরুণ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য যে আন্দোলন করছে, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা এবং সহিংসতা অন্যায্য। আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশকে সমর্থন করি। ’
মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে তুলনামূলক লিবারাল মনে করা হয়। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের কিছুটা শাসিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য ভিন্নমত অপরিহার্য। তবে ভিন্নমত কখনোই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। ’ শৃঙ্খলা বা নিয়মের মধ্যে থেকেই আন্দোলন করতে হবে বলে জোর দেন তিনি।
গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই বিক্ষোভ বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনবে না বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডন্টে। গাজায় এমন বর্বরচিত হামলার কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কখনো কখনো ইসরায়েলের সামালোচনা করলেও দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। জোর করে বিক্ষোভকারী ক্যাম্প অপসারণের চেষ্টা করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। যা গণমাধ্যম ও রাজনীতি ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বুধবার প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিছু বিক্ষোভকারী সীমা লঙ্ঘন করেছেন, যা বেআইনি আচরণ। তিনি বলেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জোর করে একটি ভবন দখল করা হয়েছে, সেখানে শান্তিপূর্ণ কিছু হচ্ছে না। এটা ঠিক নয়।
শুধু ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকেই নয়, ছাত্র বিক্ষোভের বিরোধিতা করেছেন রিপাবলিকানরাও। লুইসিয়ানার রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন মঙ্গলবার বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। তাকে বলা উচিত ছাত্ররা ভুল করছে। এখন কলেজ ক্যাম্পাসে যা ঘটছে তা ভুল। ’
আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিক্ষোভ তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা উগ্রপন্থী ও চরমপন্থী। আন্দোলনকারীরা কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস করছে। ’ এ সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরও সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় বাইডেনকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কিছুই বলেননি। ’
কোনো ন্যায্য দাবির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র আন্দোলনকে মেনে নিতে পারছে না দেশটির সরকার ও বিরোধীরা। সেখানে বাংলাদেশে কোনো আন্দোলন হলেই তার ন্যায্যতা যাচাইয়ের আগেই অনেকটা আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস। অনেকটা অ্যাক্টিভিস্টদের মতো আচরণ করেছে দূতাবাস। যা ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় দেখে গিয়েছে।
news24bd.tv/আইএএম