মাস পেরোলেও এখনো হয়নি নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান

মাস পেরোলেও এখনো হয়নি নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের মাস পেরিয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। তবে গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে নিহতদের এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি। হতাহতদের তালিকা প্রণয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ১৫ দিন সময় দিয়ে একটি স্বাস্থ্য উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এ কমিটির কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যায়নি।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকা করতে গত ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে ১৭ সদস্যের একটি উপ-কমিটি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কমিটি দেশব্যাপী আহত ও নিহতদের তালিকা প্রণয়ন এবং আহদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে বলে সে সময় জানানো হয়।

কমিটি গঠনের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এটির সদস্যরা কোনো তালিকা তৈরি করতে পারেনি। কমিটির অধীনে প্রত্যেক উপজেলায় ৫ সদস্যের একটি সেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু বিগত ২০ দিনে এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

এ বিষয়ে উপ-কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিহতদের যথাযথ ও নির্ভরযোগ্য তালিকা তৈরি করতে আরও কতদিন সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে নির্দিষ্ট করে কেউই দিতে পারেননি উত্তর।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাজারেরও বেশি নিহত হওয়ার আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিহতের তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্য উপ-কমিটির পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কিছু তালিকাও প্রকাশ হয়েছিল। এসব তালিকায় বিভিন্ন পত্রিকা ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করা হয়।

আন্দোলনে হতাহতের তালিকা করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করে একটি কমিটি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই কমিটি ৬৩১ জন নিহত ও ১৯ হাজার ২০০ আহত হওয়ার একটি খসড়া তৈরি করেছে। তবে কয়েকটি বিভাগের বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পারেনি।

গণঅভ্যুত্থানে ৮১৯ জন নিহতের পরিচয় উল্লেখ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সেখানেও অন্তত ১৮৯ জন নিহতের পরিচয় অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিহতের সংখ্যা এক হাজারের মতো হতে পারে বলে ধারণা করছে সংগঠনটি।

তবে অভ্যুত্থানের একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো হতাহতদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে শুধু হাসপাতাল এবং সংবাদপত্র নির্ভর হলে প্রান্তিক অঞ্চলের অনেকেই তালিকার বাইরে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য উপ-কমিটির একাধিক সদস্য জানান, তথ্য সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ তারা শেষ করেছেন। তারা মূলত, চারটি ধাপে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন। প্রথমত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তা তারা নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আহত ও নিহতদের তথ্য নিয়েছেন। তৃতীয়ত, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও ব্রাকের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান চিকিৎসাসেবা ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তাদের থেকে হতাহতদের তালিকা তারা নিয়েছেন। চতুর্থত, এমন কিছু গ্রুপ, যারা স্বাধীনভাবে আহত ও নিহতদের নিয়ে কাজ করেছে, তাদের থেকে তথ্য নিয়েছেন। কিন্তু এসব তথ্য এখনো গুছিয়ে আনতে পারেনি কমিটির সদস্যরা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য-উপকমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুশরা বলেন, আমাদের হাতে কয়েকটা তালিকা আছে। সেগুলো থেকে সত্যতা যাচাই করে আমরা নিজস্ব একটি তালিকা প্রণয়ন করব। ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, এটা শুধু একটি জেলার বিষয় নয়। পুরো বাংলাদেশের বিষয়।

স্বাস্থ্য-উপকমিটির সদস্যসচিব তারেকুল ইসলাম বলেন, আমরা হাসপাতালগুলো থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেখানে অসংখ্য তথ্য ভুল। একটা নাম আর ফোন নাম্বার, সেটাও আবার ভুল। এগুলো বের করা কঠিন কাজ। এছাড়া বিগত খুনি সরকার তথ্য গায়েব করার কারণে আমাদের কাজ কঠিন হয়ে গিয়েছে।

স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য আবির হাসান বলেন, আমরা যে তথ্যগুলো পেয়েছি, সেগুলো যথাযথ বিন্যস্ত নয়। ঠিকঠাক বিন্যাস না করে তো প্রকাশ করা যায় না। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তালিকা ১৫ দিনে সংগ্রহ করে ফেলব। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে প্রকাশ করলে তথ্যগুলো যথাযথ কিনা, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারতাম না।

news24bd.tv/SHS