যেসব কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী আযম  বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে

সংগৃহীত ছবি

যেসব কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী আযম বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে

অনলাইন ডেস্ক

দেশের অর্ধশতাধিক জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) কে এম আলী আযম নিয়ে গোটা প্রশাসনে এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।  

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর উইংয়ে বসার পর থেকেই তাকে নিয়ে ভেতরে ভেতরে জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী তিনজন আমলা, যারা বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে কাজ করেছেন আলী আযম।

ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী আযমের বর্তমান কর্মকাণ্ডকে ভালো চোখে দেখছেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা চান এমন অনেক সাবেক আমলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বর্তমান চেয়ারম্যান মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যখন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন, তখন বিসিএস প্রশাসন ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা আলী আযম তার ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের ব্যক্তিগত সচিবও ছিলেন আলোচিত যুগ্ম সচিব আলী আযম। এমনকি প্রশাসন ৮৪ ব্যাচের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ও আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী সাবেক সমাজসেবা সচিব জিল্লার রহমানেরও স্নেহধন্য ছিলেন আলী আযম।

একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা প্রত্যাশী জিল্লার রহমান ঢাকার জেলা প্রশাসক থাকার সময় এখনকার আলোচিত যুগ্ম সচিব আলী আযম ঢাকার আরডিসি ছিলেন।

সাধারণত, আরডিসিকে জেলা প্রশাসকের আস্থাভাজন কর্মকর্তা বিবেচনা করা হয়।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তিনজন ঘনিষ্ঠ সচিবের সাহচর্যে থাকা একজন কর্মকর্তা কোন যুক্তিতে মাঠপ্রশাসনের মতো স্পর্শকাতর ডেস্কের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পেলেন? আলাপকালে এমন প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।

বগুড়া জেলায় বাড়ি এবং যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছিলেন— মূলত এই দুই বিষয়কে হাতিয়ার করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্রুত পদোন্নতি বাগিয়ে নেন আলী আযম। এমন তথ্য দিয়ে জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানাচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এমন প্রচারকে কাজে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদায়নও নিশ্চিত করেন যুগ্ম সচিব আলী আযম।

সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সদস্য সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন) এর ভূমিকা কতটা প্রকৃত সংস্কারের পক্ষে হবে আর কতখানি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে হবে তা অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক পদায়নেই অনেকখানি পরিস্কার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগ মনোভাবাপন্ন যেসব উপসচিব ইতোমধ্যে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এবং ডিসি ফিটলিস্টে আছেন তাদের পেছনে মূল খুঁটি হিসেবে কাজ করছেন আলী আযম। এই অভিযোগ শতভাগ সত্য না-কি আংশিক সেটি প্রমাণের চেয়েও জরুরি হচ্ছে আলী আযমকে অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্যত্র পদায়ন করা। এমনটাই মত দেন দায়িত্বরত একজন সচিব। তিনি বলেন, কানাঘুষা আছে যুগ্ম সচিব আলী আযম একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে মাঠ প্রশাসন গোছাতে অতি সক্রিয় আছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি, পদায়ন বঞ্চিত কর্মকর্তা নিজের দুরবস্থা জানাতে গিয়ে আলী আযমের কক্ষে হেনস্থা, দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।

এদিকে যুগ্ম সচিব আলী আযম বগুড়ার ছেলে হিসেবে বিএনপি ঘনিষ্ঠ বলে যে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন সেটিও যথার্থ নয় বলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে যোগাযোগ করে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত হয়েছে।

একজন সচিব জানান, আলী আযমের মতো বিতর্কিত কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসনের এমন স্পর্শকাতর জায়গায় পদায়ন রাখা কোনো মতেই সমীচীন হবে না। এই পদে যিনি থাকবেন তাকে অবশ্যই সংস্কারের পক্ষের লোক হতে হবে। যেহেতু তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ তিনজন সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন, তাই যুগ্ম সচিব আলী আযমকে জনপ্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে ভালো কিছু আশা করা যাবে না দায়িত্বরত এই সচিবের।

এতদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত উপসচিব পদমর্যাদার ৫০-৬০ কর্মকর্তা, যারা ডিসি হতে পারেননি, তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) শাখায় যুগ্ম সচিব আলী আযমের কক্ষে গিয়ে মঙ্গলবার দিনভর হইচই-হট্টগোল করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের কেন ডিসি করা হলো, সে বিষয়ে যুগ্ম সচিব আলী আযমের কাছে জানতে চান পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসুর রহমানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, প্রশাসন ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা কে এম আলী আযম সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মধ্যে গত ১৯ আগস্ট তিনি একই মন্ত্রণালয়ের ‍(এপিডি উইংয়ে) যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব নেন। সূত্র: ঢাকা টাইমস

news24bd.tv/কেআই