কারখানা সচল রাখুন, সমস্যার সমাধান অবশ্যই বের করবো: প্রধান উপদেষ্টা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

কারখানা সচল রাখুন, সমস্যার সমাধান অবশ্যই বের করবো: প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক

দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পোশাক কারখানা সচল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বতীর সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধাবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।  

ড. ইউনূস বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না।

দেশের  অর্থনীতি ধ্বংস প্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করবো। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন।  অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন।
দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো। মালিক পক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন। ’  

তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারো কাম্য হতে পারে না। ’  

ড. ইউনূস বলেন, ‘ওষুধ শিল্প এবং তৈরি পোষাক শিল্প দেশের গৗরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনেরা ও তাদের কর্মকুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। দুর্বল করারতো প্রশ্নই ওঠে না। এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধা মুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইবো, যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে।  সব কিছুই সম্ভব যদি আমরা শ্রমিক মালিক সম্পর্কটা একটা নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটলো। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব অনেক। ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ে তোলার জন্য একসাথে অনেকগুলো কাজে আমাদের হাত দিতে হবে। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনকে দমন করতে যে-সব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এরমধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারকৃত সকলে মুক্তি পেয়েছেন। ’  

তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের বড় সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়াতে মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগসহ অনেকগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ  নিয়োগ এবং অন্যান্য নিয়োগ সবকটাই সম্পন্ন হয়েছে। ’  

news24bd.tv/আইএএম