মুমিনের প্রত্যাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেমন হওয়া উচিত

মুমিনের প্রত্যাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেমন হওয়া উচিত

অনলাইন ডেস্ক

মানুষ বরাবরই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। আর এই ছাড়িয়ে যেতে চাওয়ার প্রবণতাকে উচ্চাশা বলে। ইসলাম মুমিনদের উচ্চাশা পোষণ করতে বলে এবং আশা-প্রত্যাশার ব্যাপারে হতাশ হতে নিষেধ করে। তবে মুমিনের উচ্চাশা অন্যদের মতো নয়।

তার উচ্চাশার কেন্দ্রে থাকে পরকাল, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং শরিয়তের বিধি-বিধানের সীমাবদ্ধতা।

একদিকে তার প্রত্যাশা হয় সীমাহীন, অন্যদিকে সে থাকে ঈমান-ইসলামের প্রতি দায়বদ্ধ। পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে মুমিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্বরূপ ও ভারসাম্য স্পষ্ট হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না।

তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩৭)

পরকালের প্রত্যাশাই মূল : মুমিনের জীবনে পরকালের প্রত্যাশাই প্রবল থাকে। পরকালীন জীবনের ব্যাপারেই সে সবচেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এবং এটাকেই সব কিছুর ওপর অগ্রাধিকার দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের মতো, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩)

মুমিনের প্রত্যাশা সীমাহীন: দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে মুমিনের প্রত্যাশার কোনো সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। কেননা সে নিজের মেধা, যোগ্যতা ও উপায়-উপকরণের ওপর ভরসা করে না; বরং সে অসীম ক্ষমতা ও সক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ বের করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন জীবিকা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ’ (সুরা তালাক, আয়াত: ২-৩)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি তাকে বলেন, হও। ফলে তা হয়ে যায়। ’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৮২)

উচ্চাকাঙ্ক্ষায় উৎসাহ: ইসলাম মুমিনদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। যেমন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অতি পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কোরো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৬৭)

অর্জনের জন্য চাই আকাঙ্ক্ষা : মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তার ভেতর অর্জনের আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ওপরের হাত (দাতার হাত) নিচের হাত (গ্রহীতার হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদের দেবে যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তুমি বহন করো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হতে সদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরনির্ভরতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪২৭)

আরো চাই প্রচেষ্টা: যাদের লক্ষ্য বড়, তাদের প্রচেষ্টাও বড় হতে হবে। মানুষের অগ্রগতির জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষাই যথেষ্ট নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। ’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১১)

যে আকাঙ্ক্ষা নিন্দনীয়: মুমিনের জীবনে যখন পার্থিব প্রত্যাশা পরকালীন প্রত্যাশার চেয়ে বড় হয়ে যায়, তখন তা নিন্দনীয়। কেননা পরকালীন জীবনই মুমিনের আসল জীবন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখিরাতই উত্কৃষ্টতর এবং স্থায়ী। ’ (সুরা আ’লা, আয়াত: ১৬-১৭)

লেখক: মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

news24bd.tv/DHL