যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব

 ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা

কোরবানি একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মহান আল্লাহর নিদর্শনও বটে। কোরবানির বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কোরবানি বাদ দেননি। কাজেই সামর্থ্যবান মুসলমানরা অবশ্যই কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে তৎপর হবেন এবং সুযোগ হলে নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করার পাশাপাশি জীবিত বা মৃত স্বজনদের পক্ষ থেকেও কোরবানি করবেন।

সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি আদায় না করা বড় অপরাধ।

কোরবানির অপরিহার্যতা : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আদেশসূচক বাক্যের মাধ্যমে কোরবানির নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে কোরবানির ঐতিহাসিক আলোচনা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। কোরবানির বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কোরবানি বাদ দেননি।

তিনি ১০ বছর মদিনায় ছিলেন এবং প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি আদায় না করা জঘন্য অপরাধ এবং চূড়ান্ত কৃপণতা। এমন ব্যক্তিদের ঈদগাহে আসাই উচিত নয় মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর মক্কায় কোরবানিকৃত পশুকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৬)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো। ’ (সুরা : কাওসার, আয়াত : ২)

ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর মদিনায় ছিলেন, তিনি প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছাকাছিও না হয়। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)

সামর্থ্যবানদের ওপর কোরবানি অপরিহার্য : একান্নভুক্ত পরিবারের একাধিক ব্যক্তি সামর্থ্যবান হলে সবার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

আবার নারীরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি কোনো পারিবারিক ইবাদত নয় যে সবার পক্ষ থেকে একজন পালন করবে অথবা পরিবারের মধ্যে শুধু মুরব্বির পক্ষ থেকে আদায় করা হবে। বরং যিনি কোরবানির সামর্থ্য রাখেন তিনি কোরবানি দেবেন। তবে এর গোস্ত পরিবারের সবাই মিলে ভোগ করবে এবং অন্যদের খাওয়াবে। আল্লাহ বলেন, বলো হে রাসুল! ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত্সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত’।
(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)

স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর কোরবানি : সামর্থ্যবান নারীর ওপর কোরবানি অপরিহার্য। কিন্তু স্বামী, পিতা বা পুরুষ অভিভাবকের উচিত নারীর কোরবানির ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ, সামর্থ্য থাকলেও অনেক নারীর পক্ষে কোরবানির ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টের হয়। নারী কোরবানি করতে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান না হলেও পুরুষ অভিভাবক নিজের কোরবানির পাশাপাশি নারীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন। স্বামী নিজের কোরবানির পাশাপাশি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,... ‘আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? লোকজন জবাবে করল, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। ’ (বুখারি, অধ্যায় : কুরবানি, অনুচ্ছেদ : মুসাফির ও নারীর কুরবানি, হাদিস : ৫২২৮)

কোরবানির সামর্থ্যবান কারা : যাঁদের সাধ্য ও সামর্থ্য আছে তাঁদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানির (১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত) সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম তথা মুসাফির নয়, এমন স্বাধীন মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আলী (রা.) বলেন, ‘তুমি কি জানো না, তিন ব্যক্তির প্রতি বিধান আরোপিত হয় না। পাগল সচেতন হওয়া পর্যন্ত, শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত, ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত। ’ (বুখারি, হাদিস :  ৩৭৮১; তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৩; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪০০)

পরিশেষে বলা যায়, কোরবানি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। কোরবানি মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। খাওয়াদাওয়া এখানে প্রাসঙ্গিক ব্যাপার। সামর্থ্যবানদের কোনোভাবেই কোরবানি এড়িয়ে চলা উচিত নয়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
 

এই রকম আরও টপিক