জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার যখন কাঁঠাল পাতা

জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার যখন কাঁঠাল পাতা

রাজশাহী প্রতিনিধি 

জীবন যুদ্ধে কাঁঠাল পাতাকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন বৃদ্ধ সায়েদা বেগম। ৩০ বছর আগে কাঁঠাল পাতার সঙ্গে সংসার গড়েছিলেন রাজশাহীর এই বৃদ্ধা। সেই থেকে শুরু, এখনো প্রতিদিন রাজশাহীর তলাইমারি মোড়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাঁঠাল পাতা বিক্রি করেন তিনি। বয়সের ভারে কুঁজো হলেও জীবন-যুদ্ধে মানেননি হার।

কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার, ছেলে-মেয়েদের করেছেন মানুষ।

৩০ বছর আগে স্বামী মারা যায় বৃদ্ধা সায়েদার। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তখন তালাইমারি মোড়ে কাঁঠাল পাতা বিক্রি শুরু করেন তিনি।

অভাবের সময়ে কারও কাছে হার পাতেননি সায়েদা। এই কাঁঠাল পাতা বিক্রি করেই সন্তানদের বড় করে স্বাবলম্বী করে তুলেছনে। এই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, যতদিন শরীরে বল আছে, ততদিন কাঁঠাল পাতা বিক্রি করেই উপার্জন করতে চান।

সায়েদা বেগম বলেন, জীবনে কখনো কারও কাছে হাত পাতিনি। কখনো হাত পারবোও না। যতদিন সামর্থ্য আছে কাজ করে যাবো। পাতা বিক্রি করেই জীবনের বাকি সময়টুকু পার করতে চাই।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে কাঁঠাল পাতা বিক্রি শুরু করেন সায়েদা। প্রতি আঁটি কাঁঠাল পাতা তিনি বিক্রি করেন ১৫ টাকায়। অনেক ক্রেতা তার কাছ থেকে ৮/৯ বছর ধরে কাঁঠাল পাতা কিনছেন। ক্রেতারাই পছন্দ করে কাঁঠাল পাতার আঁটি নিয়ে দাম দিয়ে যান। প্রতি আঁটি কাঠা পাতা বিক্রি করে তার ২ থেকে ৩ টাকা লাভ হয়। তাই দিয়েই সংসার চালান এই বৃদ্ধা।

নগরীর অক্টয় মোড় এলাকায় বাস করা সায়েদা প্রথম জীবনে বিভিন্ন কাজ করেছেন। কখনো মেসে রান্নার কাজ করেছেন, কখনো বা হোটেলে কাজ করেছেন। পরে ৩০ বছর আগে এক কুরবানির ঈদের আগে দেখেন অনেকেই কাঁঠাল পাতা খোঁজেন কেনার জন্য। তখন তার মাথায় আসে কাঁঠাল পাতা বিক্রি করা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথমে তিনি বিভিন্ন গাছ থেকে কাঁঠাল পাতা পেরে বিক্রি করতেন। এখন আর কেউ গাছ থেকে কাঁঠাল পাতা পারতে দেয় না, তাই পবা থেকে কাঁঠাল পাতা পাইকারি কিনে এনে খুচরা বিক্রি করেন তিনি।

কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে দোকান করে দিয়েছেন।

ক্রেতারাও জানান, নিয়মিত সায়েদা বেগমের থেকে কাঁঠাল পাতা কেনেন তারা। দামও কম। নিয়মিত পাওয়া যায় তাকে। কখনো দামাদামি করতে হয় না।

news24bd.tv/SHS 

এই রকম আরও টপিক