মাঠে আ.লীগ, দিশেহারা বিএনপি-জামায়াত

সাতক্ষীরা-2 আসনের প্রার্থীরা

সাতক্ষীরা সদর-২ আসন

মাঠে আ.লীগ, দিশেহারা বিএনপি-জামায়াত

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সাতক্ষীরায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মোটরসাইকেল শোডাউন, উঠান বৈঠক, মিছিল-মিটিং, গণসংযোগ সহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে নির্বাচর্নী হাওয়া। জেলার বর্তমান জাতীয় সংসদের চারটি নির্বাচনী আসেনের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসন থেকে দীর্ঘ দিন মাঠে থেকে জোরেশোরে উন্নয়নমূলক কাজ ও উঠান বৈঠক করে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তুলে ধরে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযুদ্ধকালিন নোভাল কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। বসে নেই সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য এবং ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান প্রার্থী হতে কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কর্মী বাহিনী এলাকায় পোষ্টার ও ব্যানার টানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা সদর আসনটি ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের মধ্যে সবকটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের দখলে যায়। একটি করে বিএনপি ও জাতীয়পার্টি এবং বাকি তিনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করে।

৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হয়। তবে এ হিসাব পাল্টে যায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তখন সাতক্ষীরার চারটি আসনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দখলে যায়। দুটিতে আওয়ামী লীগ ও বাকী দুটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী (এরশাদ) জয়লাভ করে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে চার বার জামায়াত প্রার্থী জয়লাভ করে। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের অভ্যন্তরিণ কোন্দল মিটিয়ে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে জামায়াতের ঘাঁটিতে আঘাত আনতে সক্ষম হয়। ফলে আসনটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির দখলে যায়। তবে ১০ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে কোনো যোগ্য প্রার্থী না থাকায় এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নির্বাচিত হন।

গত ৫ বছরে এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার সময়ে ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক, ভোমরা পূর্ণাঙ্গ বন্দর, সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনসহ অসংখ্য ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট নির্মাণ, মসজিদ, মন্দির ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে উঠান বৈঠকে জনসাধরণের সাড়াও পেয়েছেন ভালো। সংসদ অধিবেশন চলাকালিন ব্যতীত বাকি সময় তিনি নির্বাচনী এলাকায় জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঠিয়েছেন। সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাস্তাক আহমেদ রবি এ যাবত শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নারী, পুরুষ এবং যুবক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এলাকায় ২ শতাধিক উঠান বৈঠক করেছেন। ফলে তার পক্ষে দলীয়-নেতা কর্মীদের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মনোনয়ন নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার।

তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের অনান্যদের মধ্যে মনোনয়ন চাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু। উঠান বৈঠক, মিছিল, মিটিং মোটর শোভাযাত্রা সহ মসজিদ ভিত্তিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহমেদ, শেখ সাহিদ উদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা আ.হ.ম তারেক উদ্দিন মনোনয়ন চাচ্ছেন।

এ আসনে জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাতলবু হোসেন লিয়ন, জেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু। তবে জাতীয় পার্টির মাঠে তেমন কোন কর্মকাণ্ড নেই এ আসনে। আর সরকার বিরোধী রাজনৈতিক মামলায় ৫ বছর মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত।

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়ে এলাকায় দীর্ঘ দিন গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রউফ। মাঠে থাকায় সরকার বিরোধী নাশকতার মামলায় জেল খেটেছেন কয়েকবার। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি নাশকতার মামলাও রয়েছে। গত উপজেলা নির্বাচনে সরকার বিরোধী নাশকতা মামলায় জেল-হাজতে থেকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হতে না পারলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন বিএনপি নেতা আলহাজ্ব আব্দুর রউফ।

এছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি লাবসা ইউপি চেয়ারমান আব্দুল আলিমও দলীয় মনোনয়ন নিতে মাঠে রয়েছেন তিনিও দীর্ঘ দিন প্রচার-প্রচারণা ও গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিএনপি নেতা রহমত উল্লাহ পলাশ ও আলহাজ্ব মো. আফছার আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।

এদিকে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দেস আবদুল খালেকের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে তিনিই এ আসনের বিএনপি জোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাতক্ষীরার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ সদর আসন। এখানকার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৬ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪০ জন। এখানকার মোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩৭ টি।  

সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ জানান, সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ভোমরা বন্দর, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা নদী সহ অসংখ্য খাল খনন, রাস্তাঘাট-কালভাট নির্মাণ সহ অসংখ্য উন্নয়ন কাজ করেছি বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের এই সময়ে। যা স্বাধীনতার ৪০ বছরেও করা সম্ভব হয়নি। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত মহল্লায় মহাল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নৌকায় ভোট চেয়েছি। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আবারও আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটি শেখ হাসিনার হাতে পুনারায় উপহার দিতে সক্ষম হব।

দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, সাতক্ষীরায় ২৫ হাজারের মতো তাবলিগ জামায়াতের ভোট রয়েছে। আহলে হাদিসের ভোট রয়েছে আরও প্রায় ৪০ হাজার। আমি মনে করি দল আমাকে মনোনয়ন দিলে দলীয় ভোটের সঙ্গে প্রার্থী হিসাবে উক্ত ভোট অনায়াসে যুক্ত হবে। সে ক্ষেত্রে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।

বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেজিয়ার মুক্তি ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা প্রতাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রউফ জানান, গণমানুষের সকল মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশের সাধারণ মানুষ এবং সকল রাজনৈতিক দল তাতে সমর্থন দিয়েছে। নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে বিশ্বাস করি ভোটের ব্যালটে জনগণ তার জবাব দেবে এবং বিএনপির প্রার্থী জয়যুক্ত হবে।

আগামী নির্বাচনে জয়-পরাজয় যা হোক না কেন জোট-মহাজোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিএনপির মিত্রদল জামায়াত যদি তাদের সঙ্গে থাকে তাহলে লড়াই হবে হাডাহাডি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/জুঁই/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর