দেশে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ খরচ কিলোওয়াটপ্রতি ৪৯.৪৯ টাকা

সংগৃহীত ছবি

সানেমের প্রতিবেদন

দেশে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ খরচ কিলোওয়াটপ্রতি ৪৯.৪৯ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশকে এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর নির্ভর না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিৎ বলে মনে করছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সংশ্লিষ্ট সভায় জানানো হয়, শুধুমাত্র তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ৪৯.৪৯ টাকা খরচ হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি বোঝা তৈরি করবে।

সানেমের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইসরাত হোসেন ‘টেকসই জ্বালানির উপায় অনুসন্ধান: মূল্য সাশ্রয়ী ও সবুজ বাজেট প্রেক্ষিত’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ২ টাকা খরচ হয় বলেও জানান তিনি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। সেজন্য সরকার ২০৩০ সালে এলএনজি আমদানি ৯০ মিলিয়ন টন, ২০৪০ সালে ২১ মেট্রিক টন এবং ২০৫০ সালে ৪৬ মিলিয়ন টন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে।

ইসরাত হোসেন বলেন, বর্তমানে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রে এলএনজি এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উভয়ই সরবরাহ করছে।

যার মোট হিসাব ব্যয় জিডিপির ১.৪৩%। যদি শুধুমাত্র এলএনজি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাহলে এই হিসাব ব্যয় ২০৩০ সালে জিডিপির ৮.০৯ শতাংশ হবে। অর্থনীতির উপর চাপ কমাতে সানেম নবায়নযোগ্য উৎসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশ করছে।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অবস্থা তুলে ধরে সানেম জানায়, পাকিস্তান ৬.৮%, শ্রীলঙ্কা ২২.২২% এবং ভারত ৩০.২% হলেও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ইনস্টলড ক্ষমতা ১.০১%। এদের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির (জলবিদ্যুৎ ব্যতীত) অনুপাত সবচেয়ে কম বাংলাদেশের।

সানেম একইসাথে এদিন একটি সংলাপেরও আয়োজন করে। যেখানে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'বর্তমানে, আমাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫% আসে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। আমরা এই শতাংশ হার বাড়াতে কাজ করছি। '

তিনি আরও বলেন, 'জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে জলবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে আমরা আন্তঃসীমান্ত চুক্তি করছি। আমাদের নো এনার্জির খরচের প্রভাবও বিবেচনায় নিতে হবে। '

এসময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'দেশে শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে এবং এই বর্তমান চাহিদা মেটাতে আমাদের এলএনজি দরকার। কয়েক মাস আগে ঝড়ের কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন দেশে তীব্র লোডশেডিং দেখা দেয়। '

সানেমের গবেষণা পরিচালক ডা. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, 'সরকারের পরিকল্পনায় অসঙ্গতি রয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা থাকা উচিত। সাশ্রয়ী বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে বিবেচনা করতে হবে। '

এসময় ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আগে নীতি নির্ধারণ না করে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বিদ্যুতের মান সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব খলিলুর রহমান খান বলেন, 'বিদ্যুতের মান নির্ধারণের জন্য আমাদের কাছে কোনো মানদণ্ড ছিলো না। আমরা বিদ্যুৎ গ্রিড কোড চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সেটা হয়েও গেছে। এখন আমরা বিদ্যুতের মান পরিমাপ করতে পারব। গ্যাসের জন্যও আলাদা কোডিং করা হচ্ছে। '

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছে। সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, সেখানে লুটপাট কীভাবে হতে পারে? এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটছে না। ' দেশের গ্যাস মজুদের ওপর চাপ কমাতে এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

news24bd.tv/FA