কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে যাত্রী পারাপারে রেকর্ড

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে এখনো কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভীড় রয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে সোমবার সকাল থেকে সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় যাত্রী হয়রানী ও ভোগান্তির ঘটনা ঘটেছে খুবই কম। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে ঈদের আগে পরে প্রতিদিন পদ্মা পারাপার হয়েছে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ যাত্রী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার একদিনে এ রুট ব্যবহার করে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ স্বজনদের নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। এ বিপুল সংখ্যক যাত্রী পার করতে গিয়ে ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোটগুলোকে কয়েকগুণ বেশি ট্রীপ দিতে হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শিবচর উপজেলা প্রশাসন, ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ঘাট হয়ে নিরাপদেই যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছান।  

বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ঈদ শেষে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে যাত্রীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। চাপ বেশি থাকায় প্রথম থেকেই লঞ্চ ঘাটে প্রশাসনের নজরদারিও ছিল। কিন্তু বৃহস্পতি ও শুক্রবার যেন যাত্রীদের বাধ ভাঙ্গা জোয়াড় নামে। বিশেষ করে শুক্রবারের যাত্রী উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সংখ্যক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ঢল ছিল কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ঘাটে। দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আসা যানবাহনে ছিল উপচেপড়া ভীড়। ফলে লঞ্চ, স্পীডবোট ও ফেরিগুলো দিনভর কানায় কানায় পূর্ণ ছিল যাত্রীতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন শিমুলিয়া থেকে শূণ্য ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোট এনে ভীড় সামাল দেয়।  

সূত্র জানায়, শুক্রবার দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরিগুলো মোট ১০৮ ট্রিপ দিয়েছে। এদিন মোট যানবাহন পার হয় ৩ হাজার ১৩৮। আর প্রতিটি ফেরিতে গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার যাত্রী পার হয়। বহু ফেরিতে ২ হাজার করে যাত্রী পার হয়েছে। সে হিসেবে শুধু ফেরিতেই যাত্রী পার হয়েছে দেড় লক্ষাধিক। অপরদিকে একদিন আগেই বৃহস্পতিবার ফেরি ট্রিপ সংখ্যা ছিল ৬০। শনিবার সকাল ৬ টা থেকে রবিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেরির ট্রিপ সংখ্যা ছিল ৯৬। এদিন যানবাহন পাড় হয় ২ হাজার ৪১৭। যাত্রী চাপ সামাল দিতে শুক্রবার অধিকাংশ ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে খালী আনা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর আরেক হিসেবে দেখা গেছে, লঞ্চে শুক্রবার ঘাট থেকে মোট ১৭৯ লোকাল ট্রিপ ও ১০১ পরিবহন ট্রিপ শিমুলিয়ায় যায়। বিআইডব্লিউটিএ প্রতি ট্রিপে ২০০/২৫০ শ’ যাত্রী পার করার দাবি করলেও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায় যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সে হিসেবে লঞ্চে পারাপারের যাত্রী সংখ্যা অন্তত ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার। এর আগে ১৯ জুনের এক হিসেবে দেখা যায় লোকাল ও পরিবহন ট্রিপ মিলিয়ে মোট ১৩৪ ট্রিপ দেয় লঞ্চগুলো। শনিবার লোকাল ও পরিবহন মিলিয়ে লঞ্চগুলো ১৮৭ ট্রিপ দিয়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক স্পীডবোটের মধ্যে প্রতিটি অন্তত ৫-৬টি ট্রিপ দিয়েছে। এতে দেখা যায় অন্তত ১৫ হাজার যাত্রী পার হয়েছে এ নৌযানে। এছাড়াও ট্রলারেও অসংখ্য যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়েছে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট পরিদর্শক আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এখনো কাজে ফেরা যাত্রীদের ভীড় রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিআইডব্লিউটিএসহ কর্তব্যরতদের কঠোর অবস্থানের কারণে ২/৩ দিনে বিপুল পরিমান যাত্রী নির্বিঘ্নে পার করা সম্ভব হয়েছে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাই ছিল যেহেতু বর্ষা মৌসুম সেহেতু ফেরিতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রী পারাপার করার। শুক্রবার এমনও অনেক ফেরি গেছে যেগুলোতে ২ হাজারের বেশি যাত্রী পার হয়েছে। কোন ফেরি ১২-১৫ শ’ যাত্রীর নীচে পার হয়নি। অনেক ফেরি যাত্রী চাপে পর্যাপ্ত গাড়িও  নিতে পারেনি। ’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ঈদে প্রতিবছরই লাখ লাখ যাত্রী এরুট ব্যবহার করে। শুক্রবার পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা নৌযানগুলো ওপাড় থেকে শূণ্য অবস্থায় ফিরিয়ে আনি। ফেরিতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রী পার করা হয়। নৌযান সংশ্লিষ্টদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপার সম্ভব হয়েছে। ’

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বেলাল/তৌহিদ)