গীবতের কুফল

আমরা অহরহ নিজেদের জানা ও আজনা অবস্থায় যে গুনাহটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে করে থাকি তা হচ্ছে গীবত। এটি এমন একটি গুনাহ যা করার সময় আমাদের মনে হয় না যে, আমরা গুনাহ করছি। কেননা আমরা জানি না গীবত কি? 

গীবতের শাব্দিক অর্থ হল পরনিন্দা বা সমালোচনা। অন্যের দোষারোপ করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যের সামনে তুলে ধরাকে গীবত বলে। ইসলামী শরিয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ।

গীবত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত হাদিসে আছে- রাসূল (সা:)কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, গীবত কাকে বলে? তখন মহানবী (সা:) বলেন, গীবত হলো তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন আলোচনা করা যা শুনলে সে কষ্ট পাবে।  

এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা:)! যদি সে দোষ তার মধ্যে বাস্তবেই থাকে, তাহলে কি গুনাহ হবে? জবাবে রাসূল (সা:) বললেন, হ্যাঁ এটা গীবত হবে। আর যদি তার মধ্যে বাস্তবে সেই দোষ না থাকে তাহলে সেটা হবে অপবাদ যা আরো বেশি ভয়াবহ। আমরা অনেকে মনে করি, স্বভাব চরিত্রের দোষ বর্ণনা করাই হলো গীবত, আসলে বিষয়টি এমন নয় বরং একজন মানুষের পারিপার্শ্বিক যত বিষয়ে তাকে কটাক্ষ করা যায় তা সবই গীবতের অন্তর্ভুক্ত।  

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে এই গীবতের পরিণাম বুঝাতে সুরায়ে হুজুরাতের ১২ নং আয়াতে ইরশাদ করেন- ‘আর তোমরা একে অপরের গীবত করে না। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? নিশ্চয়ই তোমরা এটাকে অপছন্দ করবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সীমাহীন ক্ষমাকারী এবং দয়ালু। ’ এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা কারো গীবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক।

গীবতের ভয়াবহতা বুঝাতে গিয়ে রাসূল (সা:) বলেছেন যা মিশকাত শরীফে রয়েছে, গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলে কারীম (সা:) কে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সা:) গীবত কিভাবে যিনা বা ব্যভিচার থেকে গুরুতর অপরাধ হয়? রাসূল (সা:) বললেন, ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর নিকট তওবা করলে আল্লাহপাক তা কবুল করেন। কিন্তু গীবতকারী ব্যক্তিকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি (যার গীবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক মাফ করবেন না।

আরও পড়ুন: জুমার দিন শুক্রবারের ফজিলত

গীবতের ক্ষতিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় গীবতকারীর সওয়াব চলে যায় এবং গীবতকারীর আমলনামায় যার গীবত করা হয় তার গুনাহ চলে আসে। এ জন্যই হযরত হাসান বসরী (রহ.) যখন শুনতে পেতেন তার সম্পর্কে কেউ গীবত করেছে, তখন তিনি সেই ব্যক্তির জন্য অনেক ফল ও বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্য হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেন, মাশাআল্লাহ তিনি আমার অনেক উপকার করেছেন। গীবত হচ্ছে গোনাহে কবীরাহ বা বড় গুনাহ। কুরআনুল কারীমে সুরায়ে হুমাযার ১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। ’ 

অতএব, গীবত কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নেই। যেখানে গীবত চর্চা হয়, কুরআনুল কারীমের সুরায়ে আনআমের ৬৮ নং আয়াতে বিধান নাজিল করে আল্লাহ পাক সেখানে বসতে নিষেধ করেছেন। অন্যদিকে কারো দ্বারা গীবতের মত গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অর্থাত্ যার গীবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তি জীবিত থাকলে তার নিকট থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া। কিন্তু যদি সে মারা গিয়ে থাকে কিংবা দূরবর্তী এলাকায় চলে যাওয়ার কারণে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয় তবে আল্লাহপাকের নিকট তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে।

news24bd.tv নাজিম