অবশেষে স্বাস্থ্যের সেই আবজাল কারাগারে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন। এর আগে আবজাল হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।   

তার পক্ষে আইনজীবী শাহিনুর রহমান এই আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।   

এর আগে গত ২৩ আগস্ট তিনি একই আদালতে আত্মসমর্পণের আবেদন করেছিলেন। পরে তা আবার ফিরিয়ে (টেক ব্যাক) নেন।   

গত বছর ২৭ জুন দুদক উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি করেন।

প্রথম মামলায় আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকার মানি লন্ডারিংসহ ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় বলা হয়, আবজালের অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্ব পরিকল্পনায় নিজ নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রুপা ফ্যাশনের নামে তফসিলি ব্যাংকের ২৭টি হিসাবের মাধ্যমে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও মানি লন্ডারিং করেন, যা ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(য) ধারায় বর্ণিত সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়া রুবিনা খানম নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দুদকে দাখিল করেন, তাতে তিনি ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, তিনি ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।   

এ কাজে স্ত্রীকে সহায়তার জন্য স্বামী আবজাল হোসেনকেও আসামি করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) এবং ২৭(১) ধারাসহ ২০০৯ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(ফ) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধে ৪(২)(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারাও সংযুক্ত করা হয়।

আরেক মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানি লন্ডারিং এবং ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।

অভিযোগে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাবরক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) আবজাল হোসেন ওই অধিদফতরে কর্মরত থেকে একজন সরকারি চাকরিজীবী ক্ষমতার অপব্যবহারের আশ্রয় নেন।

তিনি দুর্নীতির আশ্রয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের হিসাবে ২০০৯ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও ২০১২ সালের লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(য) ধারায় সন্দেহজনক লেনদেন করেন। তার এই লেনদেনে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ছিল।

এই লেনদেন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে তিনি ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানি লন্ডারিং করেন, যা ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(শ) ধারার (১) উপধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া এ প্রক্রিয়ায় ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে অর্জিত তার সম্পদ ওই আইনের ২(গ) ধারা অনুযায়ী অপরাধলব্ধ আয়।

নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাজিম