দুহাত নেই তবুও মাধ্যমিক পাশ

মুখ দিয়ে লিখেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরলো লাদেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মাসুদুর রহমান লাদেন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে ৩.৬৭ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে লাদেন।

সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরের চণ্ডিগড় ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের সাহেব আলীর দ্বিতীয় ছেলে লাদেন। জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি দুটো নেই। ফলে আর পাঁচটা ছেলে-মেয়ের থেকে কিছুটা ভিন্ন লাদেন।

তবে ছোটকাল থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল তার প্রবল ঝোক। হাত নেই তাই অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ালেখা করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে তার। তবে শেষ পর্যন্ত ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় লাদেন।

শুরুতে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পা এর পরিবর্তে মুখ দিয়ে লেখা শুরু করে। একটু একটু করে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হয় মাধ্যমিকে।

এ বছর উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় লাদেন। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতা ও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগায়। শুধু পড়ালেখা নয় খেলাধুলায়ও নাম রয়েছে তার। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে বিকেল হলেই মাঠে ছুটে ফুটবল খেলতে।

তার এই ফলাফলে মা-বাবাসহ আনন্দের বন্যা বইছে পুরো গ্রাম জুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন তাকে শুভকামনা জানাতে। এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তার পথ চলার এই গল্প।

রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার (দুর্গাপুর সার্কেল), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব সহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়েছেন।

মাসুদুর রহমান লাদেন জানায়, মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে সুন্দরভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। তারই প্রেক্ষিতে আজ এ রকম একটি ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছি। আর এই পথ চলায় প্রতিনিয়ত বাবা-মা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহের কারণে আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো ভবিষ্যতে আমি আরো ভালো কিছু করতে পারি।

লাদেনের বাবা সাহেব আলী জানান, আমার দুই ছেলের মধ্যে লাদেন ছোট। সেইসঙ্গে তার শরীরের এমন একটি সমস্যা জন্ম থেকেই। তারপরও ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল লাদেনের। কিন্তু তার দুটি হাতের কব্জি না থাকায় আমরা অনেকটা চিন্তিত ছিলাম তাকে নিয়ে। অনেকেই অনেক কিছু বলেছে আমার ছেলে নাকি পড়াশোনা করতে পারবে না। তারপরও নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই আজ এতদূর আসতে পেরেছে সে। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমার ছেলে যেনো ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু আপনাদের উপহার দিতে পারে।

লাদেনকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, তার এই ফলাফলে পুরো উপজেলাবাসী অনেক খুশি হয়েছেন। আমরা তাকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি যেন আগামীর পথ চলা আরো সুন্দর হয়। সেই সঙ্গে তার ও তার পরিবারের জন্য সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন তাকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

সূত্র- সময় নিউজ।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)