মুক্তিযোদ্ধার দোকানে বিএনপি কার্যালয়, দখল বাণিজ্যে বেপরোয়া নেতারা

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজী, দখলবাজি সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। হাই কমান্ডের নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছে না অতি উৎসাহীরা। এমনকি দখলকে কেন্দ্র করে ঘটছে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ।

অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখল করে বিএনপি কার্যালয় স্থাপনের। যদিও শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়েছে জেলা বিএনপি।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় দখল উৎসবে মেতে উঠেছে বিএনপির অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা। মামলা-হামলা সহ আতঙ্কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে জোরপূর্বক বাজার, জলমহাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এর মাঝে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শ নগর বাজাটি বিএনপি দখলে নেওয়ার বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জামিল, ইউপি সদস্য হারেস মিয়া ও স্বপন মিয়া।

লিখিত অভিযোগে জানান, সরকার পতনের পর আদর্শ নগর বাজারে লুটপাট দখল অব্যাহত রয়েছে। এখন থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সকল ধরনের কাজ বিএনপি বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেই করতে হবে। এমনকি ইউনিয়নে আটটি টিউবওয়েল বরাদ্দ আসলেও ইতিমধ্যেই চারটি বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলে নিয়েছেন। যদিও জোর করে নয়; টাকা দিয়েই বাজার থেকে বিদায় করা হয়েছে আগের বাজার সংশ্লিষ্টদের বলছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জামাল মিয়া।

তিনি বলেন, সরকার পতনের পর এমনিতেই আত্মগোপনে গিয়েছে বাজার খাস কালেকশনকারী সংশ্লিষ্টরা। পরে তাদের প্রস্তাবেই টাকা দিয়ে বাজার দখলে নিয়েছেন তারা। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কোনো অভিযোগ নেই একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও সুয়াইর ইউনিয়নের পালগাঁও বাজারে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে ক্লাব ঘরের নামে দখলকৃত জায়গা দীর্ঘদিন আগে বিক্রয় করলেও সরকার পতনের পর পুনরায় দখল করে বিএনপির কার্যালয় বানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন দুলাল।

তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আগে জায়গাটি কিনে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ সরকার পতনের পর জোরপূর্বক দোকান ঘরটি দখলে নিওয়ছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। যদিও সকল অভিযোগ অস্বীকার করছেন দখলকারীরা। দোকান দখলদার হুমায়ুন, মাহমুদুর রহমান কায়সার সহ একাধিক বিএনপি নেতা বলেন আগে থেকেই এখানে বিএনপির অফিস ছিলো। পরবর্তীতে বিক্রি করলেও এখন আবারো অফিস করা হয়েছে।

এদিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। এসব ঘটনায় বিব্রত জেলা বিএনপি। তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এস এম মনিরুজ্জান দুদু।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৃণমূলে কাজ করছে জেলা বিএনপি। বিএনপি নেতা কারোর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার দোকান ও বাজার দখলের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।

তিনি জানান, বিভিন্ন স্থানের অভিযোগগুলো আসার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে অবগত করা হচ্ছে। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঘটনাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার। সম্প্রতি কেন্দুয়ায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও পরে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া দখল, ভাঙচুর ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি মনে করছে স্থানীয়রা।

news24bd.tv/তৌহিদ