এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে জেলপালানো ৯০৯ বন্দী

জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কারাগার থেকে অনেক বন্দী পালিয়ে যান। পলাতক বন্দীদের মধ্যে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ৯০৯ জন। বিশ্লেষকেরা বলেন, এই বন্দীদের মধ্যে দুর্ধর্ষ ব্যক্তিরা আবার নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণ হতে পারে।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একটি দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

ফারুক আহমেদকে (৪৩), ২০২২ সালের ২৪ মার্চ জঙ্গিবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরির কাজ করতেন।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই শত শত মানুষ নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় সেলের তালা ভেঙে ফেললে ৮২৫ বন্দীর সঙ্গে কারাগার থেকে পালিয়ে যান ফারুক আহমেদও।

পলাতক ৮২৫ বন্দীদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে কারাগার সূত্র। এই বন্দীদের মধ্যে দুর্ধর্ষ ব্যক্তিরা আবার নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। এর ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।  

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এসময় দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন বন্দীরা। কোনো কোনো কারাগারে  বাইরে থেকে হামলা–ভাঙচুরও চালানো হয়। এসময় পাঁচটি কারাগার থেকে ২ হাজার ২৪১ বন্দী পালিয়ে যান। পলাতক বন্দীদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বন্দীসহ বিচারাধীন মামলার আসামিরা আছেন বলে জানা গেছে।

গত শনিবার পর্যন্ত পলাতক বন্দী ও আসামির মধ্যে ১ হাজার ৩৩২ জনকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখনো পলাতক আছেন ৯০৯ জন।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, যাঁরা বিশৃঙ্খলা করে পালিয়েছিল, এরই মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের অনেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। আবার অনেকে আত্মসমর্পণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়া পাঁচ শতাধিক বন্দীকে এখন কারাগারে ফেরাতে বা আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ধীরে ধীরে সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

কারা অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তারা বলেন, পালিয়ে যাওয়া বন্দীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য দেশের প্রতিটি ইমিগ্রেশনে তাঁদের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান যৌথ অভিযানেও তাঁদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

যেসব কারাগার থেকে পালিয়েছে বন্দী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে–পরে পাঁচটি কারাগার থেকে পালিয়েছেন বন্দীরা। এর মধ্যে চারটিতেই বন্দীরা ভেতর থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।

নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে ১৯ জুলাই ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান। পলাতকদের মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ৬১৯ জনের মতো আত্মসমর্পণ করেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন তিন জঙ্গি এবং এখনো ২০৪ জন পলাতক আছেন বলে জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম ইকবাল।

গাজীপুরে অবস্থিত কাশিমপুর কারাগার থেকে ৬ আগস্ট বিদ্রোহ করে ২০৩ বন্দী পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে ৮৪ জন মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া বন্দী ছিলেন। শনিবার পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

৫ আগস্ট সন্ধ্যায় কয়েক শ লোক সাতক্ষীরা কারাগারের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে প্রধান ফটকসহ কারাগারের সব সেলের তালা ভেঙে ৫৯৬ বন্দীকে বের করে নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত ৫২৯ বন্দী আত্মসমর্পণ ও গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানা গেছে।  

একই দিন বিকেলে শেরপুর জেলা কারাগারে থেকে ৫১৮ বন্দী পালিয়ে যান। শনিবার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এখন পর্যন্ত ৯১ বন্দী আত্মসমর্পণ করেছেন এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ বন্দীকে।  

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের দুই দিন পর ৭ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দীরা বিদ্রোহ করেন। কারারক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়ে ৯৮ বন্দী পালিয়ে যান। এ পর্যন্ত ৭২ বন্দী গ্রেপ্তার হয়েছেন বা আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, কিছু বন্দী ফিরে এসেছেন। যেসব বন্দীর সাজা কম ও অর্ধেক সাজা খেটেছেন তাঁরা কারাগারে ফেরত এসেছেন। যারা জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত, দাগি আসামি, তারা ফেরত আসেননি। তারা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে আছেন। এটা সবার জন্য ক্ষতিকর।

তিনি আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি পক্ষ সুযোগ নিয়ে এই পলাতক বন্দীদের দিয়ে দেশে অরাজকতা ও গোলমাল সৃষ্টি করবে। দাগি বন্দীরা অপরাধে যুক্ত হলে দেশের জন্য খুব ক্ষতি হবে। তারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, বন্দীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়িয়ে আইনের আওতায় আনার কথাও জানান তিনি।

news24bd.tv/এসএম