ইউরোপে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ১৯ জনের মৃত্যু

ইউরোপের মধ্যাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, আর বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নতুন করে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে, পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। খবর রয়টার্সের।

প্রবল বর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় গত কয়েক দিনে মধ্য ইউরোপের ৬ দেশে ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশগুলো হলো— রোমানিয়া, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং অস্ট্রিয়া।

অবশ্য এই ছয়টি দেশেই যে প্রাণহানি হয়েছে— এমন নয়। বন্যার কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চারটি দেশে— হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক এবং অস্ট্রিয়ায়। হাঙ্গেরিতে ৭ জন, পোল্যান্ডে ৪ জন চেক রিপাবলিকে ৩ জন এবং  নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বন্যা মোকাবিলায় দেশগুলোর সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা নিযুক্ত আছেন। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উপদ্রুত অঞ্চলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

জার্মানির ড্রেসডেনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শহরটিতে দুই স্তরের বন্যা সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। স্যাক্সন রাজ্যের রাজধানী শহর ড্রেসডেনের এলবে নদীর পানির স্তর ক্রমেই বাড়ছে। এলবে নদীর ওপর ক্যারোলা ব্রিজ আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।

জার্মানির তিনটি রাজ্য বাভারিয়া, স্যাক্সনি ও ব্র্যান্ডেনবার্গে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। অস্ট্রিয়ায় ভারী বৃষ্টির পর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দেশটির দানিউব নদীর শাখানদী ক্যাম্পের তীরে পানি উপচে পড়েছে। ক্যাম্প নদীর পানি স্থানীয় গ্রামগুলোয় ঢুকে পড়েছে।

বন্যা উপদ্রুত এই ৬ দেশের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় ৫ দিন ধরে চলা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিকের সীমান্তবর্তী নদী-জলাশয়গুলোর পানি বেড়ে উপচে লোকবসতি ডুবিয়ে দিয়েছে। পানির স্রোতে অনেক জায়গায় সেতু ভেঙে পড়েছে, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এমনকি পোলল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশেও বন্যার পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নাইসা ইতোমধ্যে ডুবে গেছে। শহরটির ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষকে ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।

বন্যার্তদের সহায়তার জন্য পোল্যান্ডের সরকার ইতোমধ্যে ২৫ কোটি ডলারের ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।

রোমানিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ গ্রাম ও শহর ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় বন্যার পানি এত দ্রুত প্রবেশ করেছে যে লোকজন এক কাপড়ে বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নদী দানিউবের পানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিসলাভা এবং হাঙ্গেরি রাজধানী বুদাপেস্টও ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় এই দুই শহরে ঢুকে পড়তে পারে বন্যার পানি।

হাঙ্গেরির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যান্ডর পিন্টার জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ শেষ। দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের নিয়মিত কর্মীদের সহযোগিতার জন্য ১২ হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবশ্য এখনও বন্যার পানি ঢোকেনি, তবে রাজধানীর আশপাশের এলাকা ইতোমধ্যে ডুবে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা উপদ্রুত একটি এলাকা থেকে দু’ই জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

news24bd.tv/DHL