হারিছ চৌধুরী মারা যাওয়ার আগে ছদ্মবেশে যেভাবে গোপন জীবন কাটাতেন

হারিছ চৌধুরী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছিলেন  রাজনৈতিক সচিব ও বিশেষ সহকারী। একটা কালো সানগ্লাস সবসময় ব্যবহার করতেন। দেখতে সুদর্শন। জনসভায় বক্তব্য রাখতেনই না। তাকে বলা হতো পলিসি মেকার।   এসব কথা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ে। এরপর বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথম যিনি নিখোঁজ হন তিনি হারিছ চৌধুরী।

কেউ বলতেন সিলেটে বাড়ি হওয়ার কারণে জকিগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ বলতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।   গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর ছিল তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন। জানান অনেক অজানা তথ্য।   সামিরা তানজিম চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।  দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল সিলেটভিউ-কে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি।     সামিরা তানজিম চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়া আমার বাবার পরামর্শ নিতেন। আমার বাবা প্রচারবিমুখ ছিলেন। যে কারণেই দলের নেতৃত্বকে সুরক্ষিত রাখতে নিজেকে আড়াল করে রাখেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।   তবে তার মেয়ে হারিছ চৌধুরী গত ১৫ বছর কোথায় ছিলেন এব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলেননি। রহস্যই রেখে দিলেন।  

তিনি বলেন  ‘আমার বাবা সদ্যসাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার কাছে অনেক বড় থ্রেট ছিলেন। তাঁকে দমাতে সরকার নানা কুট-কৌশল অবলম্বন করে। তবে আমার বাবা কখনো দেশের বাইরে যাননি। প্রথম থেকেই দেশে ছিলেন, ঢাকাতেই মৃত্যুবরণ করেন। আমরা চেয়েছিলাম সিলেটে তাঁর  পৈত্রিক ভিটায় দাফন করতে। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন বাহিনীর অপতৎপরতায় সেটা সম্ভব হয়নি।  

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় হারিছ চৌধুরীকে আসামি করা হয়। পরে সে মামলায় হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের আদালত। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ, এম, এস, কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলারও আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়।  

তার মেয়ে জানান ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে হারিছ চৌধুরী ( ছদ্মবেশে)  মারা গেছেন।  

তবে সিলেট ভিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়,  ওয়ান ইলেভেনের পরপরই কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেন। ঢাকায় আসার পর তিনি নাম বদল করেন। নাম রাখেন মাহমুদুর রহমান। দীর্ঘ ১৪ বছর এই নামেই পরিচিত ছিলেন। পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে। ঢাকার পান্থপথে প্রায় ১১ বছর কাটিয়ে দেন এই পরিচয়ে। এই সময় তিনি মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও নেন। পাসপোর্ট নম্বর BW0952982। এতে ঠিকানা দেন শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। বাবার নাম আবদুল হাফিজ। ২০১৮ সনের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়। পাসপোর্টে দেয়া ছবিতে দেখা যায় এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাদা লম্বা দাড়ি। চুলের রঙ একদম সাদা। বয়সের ছাপ পরেছে। শুধু পাসপোর্ট নয় জাতীয় পরিচয় পত্রও পেয়ে যান মাহমুদুর রহমান নামে। তার এনআইডি নম্বর হচ্ছে ১৯৫৮৩৩৯৫০৭।

একজন কাজের বুয়া ও একটি ছেলে থাকতো তার সঙ্গে। বই পড়ে সময় কাটাতেন। নামাজ আদায় করতেন নিয়মিত। নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

ওই সময় এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি তিন বছর ধরে এখানে কাজ করি। তার সম্পর্কে  ব্যক্তিগত তথ্য খুব একটা জানতাম না। শুনেছি তার স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন লন্ডনে। কেউ কোন দিন আসেনি। আসা যাওয়ার সময় সালাম দিতাম। তিনি হাসি মুখে সালাম নিতেন। তাকে সবাই প্রফেসর সাহেব বলেই জানতো। নিঃসঙ্গ এই মানুষটির মৃত্যুও হয় নিঃসঙ্গতায়।

কেন এই ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন এ ব্যাপারে  সামিরা চৌধুরী বলেন, এছাড়া উপায় ছিল না। শেখ হাসিনা তাকে মেরে ফেলতেন।   জীবিত থাকা অবস্থায় আমি লন্ডন থেকে টেলিফোনে উনার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। আমার স্বামীও চার বছর আগে একবার ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করে। সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত আমার ভাই নায়েম শাফি চৌধুরীর সঙ্গে বাবার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সে ওই সময় সুইজারল্যান্ডে সিনিয়র এনার্জি এনালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলো।  

news24bd.tv/ডিডি