<p><strong>দুই বিশেষজ্ঞের মতামত</strong></p>

এবারের বন্যার পেছনের আসল কারণ ও রাজনীতি

( বন্যার পেছনের কারণ ও রাজনীতি নিয়ে  নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন শেখ রোকন ও বাতেন মোহাম্মদ। অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন কারণ ) 

বন্যা ও  বিতর্ক

শেখ রোকন 

অনেকে ফেসবুক, ফোন, হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে নক করেছেন। সময়ের অভাবে সবাইকে একসাথে বলি- ভাইরে বা আপারে, বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন। অতিবৃষ্টি হলে বন্যা হয়; বন্যার পানি গড়িয়ে নিচে নামে, বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার মানে না; এটা তো যে কেউ জানে! এজন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কুমিল্লার গোমতীর পানিতে যে ফেনীর মুহুরিতে বন্যা হবে না, সেটাও কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। এসব নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এখানে ভারত-বিরোধিতা বা ভারত-বন্ধুত্বেরও কিছু নেই। প্রশ্নটা অন্যত্র। . প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, গোমতী বা মুহুরীতে ভারতীয় ড্যাম বা ব্যারাজ আছে কিনা? উত্তর হচ্ছে, আছে। যারা বলছেন মুহুরীতে ব্যারাজ নেই, তারা ভুল বলছেন। মুহুরী নদীতে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার কলসিতে একটি ব্যারাজ রয়েছে। মুহুরী অববাহিকার উপনদীগুলোতেও রয়েছে একাধিক ড্যাম। না জেনে কথা না বলাই ভালো। এবারের অতিবৃষ্টির বন্যা যে ড্যাম-ব্যারাজ খোলার জন্যই বিপর্যয়কর হয়েছে, সেটা বোঝা যায় স্রোত দেখে। স্বাভাবিক বন্যার পানি নদীতে স্রোত তৈরি করতে পারে, মাঠে ও বসতিতে স্রোত তৈরি করার কোনও কারণ নেই। এবারের বন্যা কতটা বিপর্যয়কর হয়েছে, পানি নেমে যাওয়ার পর আরও বেশি বোঝা যাবে। .দ্বিতীয় প্রশ্ন, গোমতীর ডম্বুর ড্যাম বা মুহুরীর কলসি ব্যারাজ থেকে পানি ছাড়ার আগে উজানের দেশ ভারত ভাটির দেশ বাংলাদেশকে আগাম সতর্ক করেছিল কিনা? উত্তর হচ্ছে, করেনি। এটা ঠিক, বৃষ্টিপাত ও বন্যার আগাম তথ্য বাংলাদেশকে জানিয়ে থাকে। কিন্তু ডম্বুর-কলসি ব্যারাজ বা ড্যাম খুলে দেওয়ার তথ্য বাংলাদেশকে জানায়নি। .তৃতীয় প্রশ্ন, না জানিয়ে ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দিলে কী অসুবিধা? বন্যা তো এমনিতেই হচ্ছে। স্বাভাবিক বন্যা হতেই পারে, তাতে খুব একটা অসুবিধা নেই। কিন্তু যখন হঠাৎ ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দেওয়া হয়, তখন সেই বন্যা বিপর্যয়কর হতে বাধ্য। স্বাভাবিক বন্যায় হয়তো তিন দিন ধরে পানি বাড়ে ও চলে যায়। কিন্তু ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দিলে তিন দিনের বন্যা তিন ঘণ্টার ঘনত্বে চলে আসে। আর যদি ভাটির দেশকে না জানিয়ে ব্যারাজ ছাড়া হয়, তাহলে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি ও দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতার সময়ও থাকে না। জান ও মালের ক্ষতি অনেক বেশি হয়। এবার সেটাই ঘটেছে। .চতুর্থ প্রশ্ন, না জানিয়ে ড্যাম-ব্যারাজ খুলে দেওয়ার জন্য যৌথ নদী কমিশনে বাংলাদেশ পক্ষ কি ভারতীয় পক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে? উত্তর, সম্ভবত না। সেজন্যই আমি বলেছিলাম, যৌথ নদী কমিশন ঘুমাচ্ছে কিনা? .পঞ্চম প্রশ্ন, তাহলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া বিভাগ 'তথ্য জানানোর কথা' বলছে কেন? লেখাটি ফেসবুকে দেওয়ার পর অনেকে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চেয়েছন। এখানে কমেন্টও করেছেন। আমার বক্তব্য হলো, ভারত যেটা জানিয়েছে, সেটা হলো বৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য। আবারও বলছি 'বৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য'। অভিন্ন নদী অববাহিকায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য পরস্পরকে জানানোর বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চু্ক্তিও রয়েছে। যেমন ব্রহ্মপুত্রের তথ্য চীন আমাদের জানিয়ে থাকে। যেমন আত্রাই বা পুর্নভবা নদী অববাহিকার দিনাজপুর বা ঠাকুরগাঁওয়ে অতিবর্ষন বা বন্যা হলে আমরা ভারতকে সতর্ক করি; যাতে করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রস্তুতি নিতে পারে। এই ক্ষেত্রেও ভারত ত্রিপুরায় অতিবৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য জানিয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল, সুনির্দিষ্টভাবে ডম্বুর ও কলসি ড্যাম ও ব্যারাজের গেইট খোলার তথ্য কি ভারত জানিয়েছিল? উত্তর হচ্ছে, না। ভারতীয় পররাষ্ট্র বা আবহাওয়া দপ্তরও সেটা দাবি করেনি। এই যে ড্যাম বা ব্যারাজের গেইট খোলার তথ্য জানায়নি, সেটাই বন্যাটিকে বিপর্যয়কর করে তুলেছে।  

লেখক : নদী বিশেষজ্ঞ, ঢাকা।  

পানি রাজনীতি খুব জটিল , আসিফ নজরুল  সৈয়দা রিজওয়ানাদের ভালো জানার কথা 

বাতেন মোহাম্মদ

পানি রাজনীতি খুব জটিল। এটা ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে হিন্দু- মুসলিম বাইনারী উসকে দেয়ার ভ্রান্ত রাজনীতি না। এটা প্রতিবেশী দেশের চিরাচরিত দ্বন্ধ মুখর রাজনীতি থেকেও বহুলাংশে জটিল। যতগুলো রাজনীতি আছে তার মধ্যে পানি রাজনীতি সবচেয়ে এডুকেটেড ও ইন্টিলিজেন্ট রাজনীতি। না বুঝেই বডর করে আপনার অশিক্ষিত মনকে পানি রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে হিন্দু- মুসলিম বাইনারী উসকে দিয়ে ভাবিয়েন না, আপনি পূন্য করছেন কিংবা বিশাল পন্ডিত হয়ে গেছেন। আপনি মূর্খ মূর্খই থেকে গেলেন। মাঠের রাজনীতি আর পানি রাজনীতি এক না। পানি রাজনীতি বুঝতে তথ্য উপাত্ত লাগে, স্লো- কাম-এন্ড স্টিডি মাইন্ড লাগে, ভূগোল, পরিবেশ নিয়ে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত মাথায় রাখতে হয়। ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪ ( মোট আন্তর্জাতিক নদী ৫৭- ৩ টা মায়ানমারের সাথে) কিংবা মতান্তরে ৬২। ভাটির দেশ হিসাবে এইসব আন্তর্জাতিক নদীতে আমাদের পানি প্রাপ্তির অধিকার আন্তর্জাতিক নানা আইন দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সেসব আইন কে এক্সেপ্ট করেছি কিনা? হেলসিংকি প্রিন্সিপাল আমরা কতটুকু পালন করছি? ( হেলসিংকি প্রিন্সিপাল নিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক M Mizanur Rahaman এর ভালো গবেষনা আছে)-- ১৯৯৬ সালের নন- নেভিগেশনাল ওয়াটার এক্ট আমরা স্বাক্ষর করেও অনুসমর্থন কেন করছি না? ( এটা নিয়ে নদী গবেষক Sheikh Rokon অনেক দিন থেকেই এডভোকেসি করছে) এটাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পানি সংক্রান্ত বন্টনের সবচেয়ে বড় আইন। । যে আইন ভারত স্বাক্ষর করেই নি। । আমরা স্বাক্ষর করেও ভারতের চাপে অনুসমর্থন করিনি। ভারতকে পানির বন্টনে বাধ্য করতে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বাহিরে বহুপক্ষীয় আলোচনায় টেনে নিতে না পারার ব্যর্থতা কাদের? পৃথিবীতেই পানি বন্টন চুক্তির সবচেয়ে ক্লাসিক ও কার্যকরী সমঝোতা-- ইন্দাস ট্রিটি-- সিন্ধু নদের শাখানদী ও উপনদী গুলোর মধ্যে কয়টা পাকিস্তান আর কয়টা ভারত ব্যবহার করবে সেই সংক্রান্ত চুক্তি। সেটা হয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তত্ত্ববধানে। দুই দেশই সেটা মেনে চলে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে এত বৈরিতা থাকার পরেও ইন্দাস ট্রিটি তারা মেনে চলে। সেখানে এই রকম একটা কার্যকর চুক্তি করতে পারিনি আমরা। আমরা তৃতীয় পক্ষকে গ্যারান্টার হিসাবে আনতে পারিনি যাতে ভারতকে চুক্তির শর্ত সমুহ মানতে বাধ্য করা যায়।   ফারাক্কা বাঁধ আন্তর্জাতিক আইনের বৃহদাংশে লংঘন। ভালো হোক, খারাপ হোক ফারাক্কা নিয়ে তাও কিছু চুক্তি আছে। । অন্য নদী গুলোতে সেটাও নেই। এই ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা নেই। তিস্তার গজলডোবায় ভারত বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি নিয়ন্ত্রন করেছে, কিন্ত ভাটিতে আমরা তিস্তা ব্যারেজ করে আরেকটু ভাটির গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের সাথেও কি একই অনাচার করে যাচ্ছিলাম না? আমাদের ইন্টারনাল পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা কই? ইকুয়েটি কি ইন্টারনাল পানি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযোজ্য না? পানি রাজনীতি যতটা সীমান্ত দেশের সাথে, ঠিক ততটাই আভ্যন্তরীন পানি ব্যবস্থাপনার নিয়েও। আমাদের জি- কে ( গংগা- কপোতাক্ষ) প্রজেক্টের ইভালুয়েশন কই? মেঘনা - ধানাগোদা প্রকল্পের আউটকাম কি? জি -কে প্রজেক্টের কারণেই কি কপোতাক্ষ মরে গেলো? উজানে ফারাক্কা ব্যারেজ থাকার পরেও কোন আক্কেলে আমরা জি-কে প্রজেক্ট করে পানি আরো ডাইভার্ট করলাম? ভৈরব নদ কে পুনরুজ্জীবিত করার প্রকল্প মাঠে কারা মেরে ফেললো? সুন্দরবনে ফ্রেশ ওয়াটার ফ্লো বাড়ানোর এই উদ্যোগ যে সমন্বয় হীনতার কারণে যে মাঠে মারা গেলো সেই আলোচনা কই? গড়াই ও মধুমতির ফ্রেশ ওয়াটার ফ্লো মনসুনে কত আর ড্রাই সিজনে কত? এর কারণে সুন্দরবনে স্যালিনিটির তারতম্য কি হয়? অনেক আগে Sparso র একটা গবেষনা দেখলাম সুন্দরবনে স্যালিনিটির কারণে স্পিসিস কম্পোজিশন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার। ফলো আপ দেখি নাই আর। ফারাক্কার কারণে আমাদের গড়াই ও মধুমতির কি অবস্থা সেই সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত কি আছে আমাদের? গবেষনা আছে? মনিরুল কাদের মির্জার সেই ২০০৪ সালের গবেষণার পর আর কোন গবেষনা চোখে পড়েনি। কিন্ত এটাতো হওয়া উচিত ছিলো আমাদের রুটিন কাজ। না হলে ভারতের সাথে পানি বন্টন আলোচনায় আমরা কিভাবে নেগোশিয়েট করবো? আগেই বলেছি পানি বন্টন আলোচনা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ও সায়েন্টিফিক ডিপ্লোম্যাসি। এখানে গা জোয়ারি আর ফেসবুকের সাম্প্রদায়িক উস্কানী রাজনীতিতে কাজ হয় না। ডম্বুর লেকের সাথে মহুরী, ফেনী, সিলোনিয়া নদীর সম্পর্ক কি? সবাই কে উসকে দিচ্ছেন, আগে সঠিক তথ্যটা জানবেন। ভুল উসকানী প্রতিবেশি দেশ ক্যাশ করবে। এবং এটাই বারবার হয়। যেটা জানেন না, বুঝেন না- সেখানে রাজনীতি করতে যাইয়েন না। এতে হিতে বিপরীত হয়। আর পানি বন্টন চুক্তি হয় শুষ্ক মৌসুমের পানি বন্টন নিয়ে। যেকোন ওয়াটার শেয়ারিং চুক্তির ৮০% ই শুষ্ক মৌসুম কেন্দ্রিক। মুনসনাল ওয়াটার শেয়ারিং ইস্যু প্রধান না। তবে মনসুনাল ওয়াটার, ফ্লাড ইনফরমেশন, আর্লি ওয়ার্নিং শেয়ারিং তো একটা রেগুলার কাজ ছিলো। সার্ক মেটেরিওলজিকাল সেন্টারের অধীনে এই ধরনের তথ্য আদান প্রদান তো নিয়মিতই হতো জানতাম- সেগুলো কি তাহলে ফাংশনাল না? উজানের নদীতে বাঁধ দেয়া আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী। ডম্বুরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে বাংলাদেশ আগে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছিলো কিনা? ডম্বুরে বাধের কারণে গোমতীর প্রবাহ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা নিয়ে আমাদের কোন তথ্য উপাত্ত আছে? আমি শুনি নাই। জল কপাট খুলে দেয়ায় বন্যা হয়েছে এটা অতি সরলীকরণ। উজানে পানি বাড়লে এমনিতেও বাধ ভেংগে যেতো তাতে ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি বই কম হতো না। উজানে ভারী বষর্ণ, পূর্ব হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলা সহ নানা কারণেই আমাদের অবস্থান নাজুক। এইসব কারণে শুধু ভাটি না, উজান ও ক্ষতিগ্রস্থ। এটা শুধু পানি বন্টন চুক্তির কারণেই হচ্ছে এমন না-- এটার কারণ ভারতে সিকিম, দার্জিলিং, ত্রিপুরায় অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মান, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ড্যাম ও ভুল ভাবে পাহাড়ি ক্ষরস্রোতা নদী ব্যবস্থাপনা। ভাটির দেশ হিসাবে এই ধরনের ব্যবস্থাপনার ট্রান্সবাউন্ডারী প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। এইবারের বন্যায় যতনা জলবিদ্যুৎ এর বাঁধ দায়ী তার থেকেও বেশি দায়ী অতি বৃষ্টি, হিমবাহ গলে যাওয়া। এইগুলোর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তথ্য উপাত্ত ও আগাম বন্যা ব্যবস্থাপনা জোরদার করা। মহুরী নদীর পানি বন্টন নিয়ে নিশাত স্যারের নেতৃত্বে কারিগরী কমিটি যে সুপারিশ করেছিলো সেটা বাস্তবায়ন করলে বন্যার প্রকোপ হয়তো কমতো না, কিন্ত ক্ষয়ক্ষতি হয়তো কিছুটা কমতো। আমাদের জলাধার গুলো অব্যবস্থাপনায় পানি ধারণ ক্ষমতা আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। তাই প্রাকৃতিকভাবেই দু একটা অতিবৃষ্টির ইভেন্টেই আমরা বন্যার কবলে পড়ছি। নদীগুলো দখল, ভরাট হয়ে পানি স্প্ল্যাশ হয়ে বন্যা হওয়া স্থানীয় পানি রাজনীতি। সেটাও জোরদার করেন। মুহুরী প্রজেক্ট এই মুহুর্তে গলার কাটা কিনা সেই পর্যালোচনাও জরুরী। উজানের যে পানি নেমে আসে তার কত শতাংশ বংগোপসাগরে ওয়াস্টেড হয় সেই আলোচনা দেখলাম না। আমাদের নদী গুলোর সম্মিলিত পানি ধারণ ক্ষমতা কত? কেউ জানেন? আমরা বর্ষায় কত পানি পর্যন্ত রিভার কোর্সে রাখতে সক্ষম আর কত পানি বেড়ে গেলে সেটা ফ্লাড হবে এমন কোন মডেলিং কি Warpro কিংবা ওয়াটার মডেলিং ইন্সটিটিউট কিংবা সিইজআইএস করেছে? রাজনীতি এটা নিয়েও করেন- পানি সংক্রান্ত গবেষনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি। এগুলোর অটোনমি ও বাজেট এইসব নিয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রন অবকাঠামো নিয়ে যে হরিলুট সেটা নিয়েও রাজনীতি করেন। তাহলে সিস্টেমের সামগ্রিক উন্নতি হবে। একই সাথে আমরাও ওয়াটার নেগোশিয়েশনে তথ্য উপাত্ত দিয়ে একটা শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবো। JRC ( Joint River Commission) পূর্নগঠন করেন। সরকারী ট্রেইন্ড আমলার সাথে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দিয়ে এই কমিটিকে পূর্নগঠন করে শক্তিশালী করেন যেন আমরা ওয়াটার নেগোশিয়েসনে শক্ত অবস্থান নিতে পারি। আমাদের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পি এইচডির থিসিস ফারাক্কার পানি বন্টন নিয়ে। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও অনেকদিন পরিবেশ নিয়ে এডভোকেসি করার কারণে পানি সংক্রান্ত রাজনীতি ভালোই বুঝেন। তাই উনাদের কাছে প্রত্যাশা এই পানি রাজনীতির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দুই স্তরেই আমরা ভাটির দেশ হিসাবে ন্যায্য দাবী আদায় করতে সমর্থ হবো। আর বন্যার মানব সৃষ্ট দিক যেমন আছে, তেমনি প্রাকৃতিক কারণ ও আছে। তাই ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীতে কত হিন্দু আছে, তারা কেন এখন শাহবাগে দাঁড়ায় না ( আমার পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সহপাঠী ও ভাই বোনকেও দেখলাম এই ধরনের নোংরা ও সস্তা পোষ্ট শেয়ার করতে। ছি। লজ্জা) এই ধরনের ঘৃণাবাদী, সস্তা বাহবা পাওয়ার শিট পোষ্ট শেয়ার করে নিজের ভেতরের নোংরামী আর ফ্যাসিবাদিকে সামনে এনে বন্যার যারা দূর্গত তাদের কে আর গুটি বানাইয়েন না। আগে গিয়ে তাদের পাশে দাড়ান। আপনাদের এই নোংরামিতে তাদের চার আনার লাভ ও হচ্ছে না। যদি সত্যি মন থেকে তাদের ভালো চান-- তাহলে দোষারোপ আর ধর্মের রাজনীতি ছেড়ে আগে তাদের পাশে দাড়ান- আর্থিক,মানবিক, শারিরীক- যেভাবেই হোক। তারপর বন্যা কমে আসলে-- একটু পড়ালেখা করে আমাদের সরকারকে চাপ দিয়েন যেন পানি রাজনীতির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দুই স্তরেই আরো জোরদার ভূমিকা নেয়।

( লেখার ভাষাভঙ্গী লেখকের নিজস্ব রীতি) 

লেখক : গবেষক ও শিক্ষক  , স্টকহোম ইউনিভার্সিটি, সুইডেন

news24bd.tv/ডিডি