গণঅভ্যুত্থান যাদের 'নির্বাচিত' করে তারা সকল জনগণের দ্বারা 'নির্বাচিত'

অন্তর্বর্তী সরকারের কোন বিধান বাংলাদেশে নাই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার 'অবৈধ'। তাই তাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আদালতের মতামতের ভিত্তিতে 'বৈধ' দাবি করলে অন্তর্বর্তী সরকার 'বৈধ' হয়ে যায় না। তাই আমাদের প্রথম কাজ 'অন্তর্বর্তী সরকার'কে জনগণের দ্বারা 'নির্বাচিত' সরকার হিশাবে, 'বৈধ' সরকার হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করা।   আমরা ড. ইউনুস এবং তাঁর কেবিনেটকে 'নির্বাচিত' বলছি কেন? কারণ জনগণের অভিপ্রায়ের সর্বোচ্চ অভিব্যাক্তি হিশাবে গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ তাঁদের 'নির্বাচন' করেছে। এই ধরণের 'অন্তর্বর্তী সরকার'-এর অতএব আবার ভোটে নির্বাচিত হবার দরকার নাই। তারা জনগণের দ্বারা ইতোমধ্যেই 'নির্বাচিত'। শুধু ভোটের দ্বারা 'নির্বাচিত' হলেই সেটা শুদ্ধ তার কোন যুক্তি নাই। সেটা আইন কিম্বা রাজনীতি কোন দিক থেকেই নয়। ভোটাভুটি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থান যাদের 'নির্বাচিত' করে তারা সকল জনগণের দ্বারা 'নির্বাচিত' হয়ে আসেন। অতএব ফালতু 'নির্বাচনবাদী' তর্ক তুলবেন না। অন্তর্বর্তী সরকার আইন ও রাজনীতি উভয় অর্থেই বৈধ। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংবিধানের অধীনস্থ সরকার 'অবৈধ'। কেন? কারণ এই সরকার সাংবিধানিক সরকার নয়। এর প্রধান কাজ যে গণঅভিপ্রায় তাদের 'নির্বাচিত' করেছে জনগণের সেই অভিপ্রায়কে একটি লিখিত গঠনতন্ত্রে রূপ দান করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। অর্থাৎ এই সরকারের প্রধান কাজ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভা আহ্বান এবং নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নে সমাজের সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। একইসাথে বাংলাদেশের আগামি রাষ্ট্র 'গঠন' বা রূপ হাজির করা।   কিভাবে সেটা করা যায় সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা নানান ভাবে ভাবতে পারি। যেমন, ঢাকা কেন্দ্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভা ডাকার আগে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে আমরা 'গঠনতন্ত্র কমিশন' গঠন করতে পারি। কেন্দ্রীয় গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভা ডাকার আগে 'গঠনতন্ত্র কমিশন' জনগণের অভিপ্রায় ধারণ করবে, বিভিন্ন বিষয় এবং গণস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক করবে। অর্থাৎ তারাই হবে জাতীয় গঠনতন্ত্র সভা আহ্বানের আগে সত্যিকারের 'জনগণের গঠনতন্ত্র সভা'। গঠনতন্ত্র প্রণয়ণে জনগণকে সম্পৃক্ত করবার আরো নানান পদ্ধতি আমরা ভাবতে পারি। কিন্তু সবার আগে এখন দরকার ড. ইউনুস এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক ও আইনী উভয় অর্থে 'বৈধ' জনগণের সরকার হিশাবে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।   বন্ধুরা যে তরুণরা এই গণ অভ্যুত্থানকে ধাপে ধাপে বিকশিত করেছে, তাদের বোকা বা শক্তিহীন ভাববেন না। তারা ইতোমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ফিলিস্তিনের বিখ্যাত আইনজীবিদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব রুখে দেবার জন্য যে প্রস্তাব করছি তা ভাল ভাবে বুঝে নিন। আইনের ভাষায় একে বলা হয় Popular Sovereignty তর্ক। জনগণ যেহেতু সার্বভৌম, অতএব গণ অভ্যূত্থানের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারও 'বৈধ'। এই তর্ক অনুযায়ী, আইনের বৈধতা জনগণের অভিপ্রায়ের সঙ্গে যুক্ত। জনগণ বলতে বোঝায় যারা ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র উৎখাত করেছে এবং জীবন দিয়ে 'অন্তর্বর্তী সরকার' কায়েম করেছে।   যারা সরকারে রয়েছেন, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হয়েছেন কারণ কৌশলগত ভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি ছাড়া আমরা স্থিতিশীল হতে পারব না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি:  ১. কোন শ্রমিক প্রতিনিধি এখনও সরকারে নিয়োগ দেওয়া হয় নি। ২. কোন কৃষক প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয় নি। ৩. শিল্পকলা, সাহিত্য, কিম্বা সাংস্কৃতিক মহলের পক্ষ থেকে কোন যোগ্য প্রতিনিধিকে নিয়োগ দেওয়া হয় নি।   সমাজের এই সকল শক্তিশালী শ্রেণী ও গোষ্ঠির সমর্থন ছাড়া আমরা গণভ্যুত্থানকে বিজয়ী গণ অভ্যুত্থানে রূপ দিতে পারবো না।   আমরা আরও লক্ষ্য করেছি, প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবদান যথাযোগ্য মূল্যায়ন করা হয় নি।   সর্বোপরি এমন কয়েকজন উপদেষ্টা দেখছি যাদের মতাদর্শ এবং অতীতের ভূমিকা সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত। যা তরুণদের অস্বস্তি বাড়াবে।   আমরা যে কোন মূল্যে আমাদের অর্জন রক্ষা করব।

news24bd.tv/ডিডি