আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে সরানো হলো লোহার খাঁচা

ঢাকার আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে শুনানির সময় আসামিদের রাখার লোহার খাঁচা সরানো হচ্ছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে। জানা যায়, একে একে সব আদালত কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হবে।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উচ্চপর্যায় থেকে লোহার খাঁচা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতের একটি আদালত (২৮ নম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরানো হয়। গণপূর্ত বিভাগের লোকজন লোহার খাঁচাগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সিএমএম আদালতের লোহার খাঁচায় রাখা হয়। তবে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানকে আদালতের লোহার খাঁচায় রাখা হয়নি।

এর আগে কয়েক বছর ধরে ঢাকার আদালতগুলোতে গ্রেপ্তারের পর কাউকে আদালতে তোলা হলে এজলাস কক্ষের এক পাশে থাকা একটি লোহার খাঁচায় রাখা হতো। আবার কোনো মামলার আসামি হয়ে কেউ হাজিরা দিতে গেলে তাঁকেও খাঁচার মধ্যে ঢুকতে হতো। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর এখন থেকে আর কাওকে লোহার খাঁচায় রাখার সুযোগ থাকছে না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, এজলাস কক্ষে এভাবে আসামিকে লোহার খাঁচায় ঢোকানো অমানবিক ও সংবিধান–পরিপন্থী। এই ব্যবস্থা আর থাকা উচিত নয়।

সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার–সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদের (ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস–আইসিসিপিআর) ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাউকে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।

আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ১৪(২) অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধের জন্য অভিযুক্ত প্রত্যেকের আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ বলে গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসও আদালতের এই লোহার খাঁচা নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলায় হাজিরা দিতে তাঁকে বহুবার আদালতে যেতে হয়েছে। এ সময় তাঁকেও আদালতের লোহার খাঁচায় রাখা হয়।

সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘একজন নিরপরাধ নাগরিককে শুনানির সময় লোহার খাঁচায় (আসামির কাঠগড়া) দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক। একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে শুনানির সময় পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেখানে তিনি তখনো দোষী সাব্যস্ত হননি। ’

news24bd.tv/DHL