<p>আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরকার</p>

ছাত্র আন্দোলন আর সন্ত্রাসকে একসঙ্গে মেলাবেন না

ইস্যুভিত্তিক ছাত্র আন্দোলন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একসঙ্গে না মেলাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রোববার সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী যা ঘটেছে, তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পটভূমিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

ওই নিরাপত্তা বাহিনী ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ ‘দেখা মাত্রই গুলি’ করার মতো একটি ঘটনাও ঘটায়নি। রঙের আড়ালে দৃশ্যমান ‘ইউএন’ (জাতিসংঘ) লেখা ‘অ্যান্টি পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি)’ অসাবধানতাবশত ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এপিসি ব্যবহারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

হেলিকপ্টার থেকেও কোনো গুলি করা হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে বিএনপি, জামায়াত ও শিবির। তারাই এখন দেশে-বিদেশে ছাত্র আন্দোলন দমন করা হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় নাগরিক সমাজ, সংস্থা ও গণমাধ্যমসহ কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদারের প্রকাশ করা উদ্বেগ সরকার আমলে নিয়েছে।

প্রপাগান্ডা, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যসংবলিত ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও পরিস্থিতি অনুধাবন ও জোরালো সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানায়। সরকার সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করছে, সরকার ও জনগণের সময়োপযোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে ফিরছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিহতের সঠিক সংখ্যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সরকার প্রাণহানি, আহত ও সরকারি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১৪৭-এ পৌঁছেছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জীবিকার সুযোগেরও আশ্বাস দিয়েছেন। সরকার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের ট্রমা মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সংবেদনশীল রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি অংশের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মারধরের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছে। তা এখন স্পষ্ট। তারা কিছু সহিংস চরমপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়েছে। তারা জনজীবনকে ব্যাহত এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে তাদের পুনরাবৃত্তিমূলক চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রদের আন্দোলনকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়।

ওই গোষ্ঠীই এখন নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আইনসম্মত উদ্যোগগুলোকে ‘ছাত্রবিক্ষোভ দমন’ হিসেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংশ্লিষ্ট ছাত্র নেতারা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও এ ধরনের বিকৃত প্রক্ষেপণ স্থান পায়।

ইস্যুভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনকে পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে না মেলাতে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পটভূমিতে জনগণের জীবন রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সরকারকে আইনসম্মতভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন এবং নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় কারফিউ জারি করতে হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন, আদালতের রায়, সংঘাত, সহিংসতা ও নাশকতার তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

সরকার সব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছে। ইন্টারনেটসেবা চালু হয়েছে। কারফিউয়ের সময় গণমাধ্যমকর্মীরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকার যেকোনো মূল্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে সমুন্নত রেখেছে এবং অব্যাহত রাখবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার সাধারণ জনগণের সঙ্গে কাজ করে যাবে। সরকার একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রচষ্টোর অনুসরণে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

news24bd.tv/DHL