চেরাপুঞ্জি টু সিলেট: কোন দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি?

আবহাওয়া ও ভৌগলিক দিক থেকে ভারত বাংলাদেশ অভিন্ন হওয়ায় দেশদুটিতে আবহাওয়ার ভালো ও বিরূপ দুই চিত্রই একইসাথে বদলায়। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে সিলেটে প্রভাব পড়ে। মেঘালয়ের সেই বিরাচারই যেন চোখ রাঙাচ্ছে সিলেটে।

মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত যদি ১০০ মিলিমিটারের নিচে নামে তবে, আস্তে আস্তে পানি নেমে যাবে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যদি প্রতিদিন গড়ে ২০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে পানি আবার বেড়ে যাবে। ফলে সিলেট ও তৎসংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে।

এ মুহূর্তে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, শেরপুর বন্যা কবলিত। টানা ও ভারী বৃষ্টিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রংপুর অঞ্চলেও। একইসাথে আরেও দুইটি জেলায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নতুন করে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে হবিগঞ্জ ও ফেনী।

সতর্কীকরণ পূর্বাভাসে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী এবং ফেনীর মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তবে, এই দুটো পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকলেও বন্যা স্বল্পমেয়াদী হবে বলে আশা করছে আবহাওয়া অফিস।

বন্যা পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটা পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যা পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে এমন প্রশ্নে আবহাওয়াবিদদের মত, 'পরবর্তী তিন দিনের উপর বন্যা পরিস্থিতি নির্ভর করছে। এ তিন দিনে বৃষ্টিপাত কমলে পানি কমে যাবে। কিন্তু বেড়ে গেলে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতি বাড়বে। '

এদিকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও কয়েকটি এলাকা। তাহিরপুরের সাথে সুনামগঞ্জের সাথে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

আজ সকাল পর্যন্ত দুটি নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাত থেকে পাহাড়ি ঢল কম নামায় কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

অন্যদিকে সিলেটের কুশিয়ারার পানি না কমায় মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি শহরের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সে.মি. উপর দিয়ে এবং কুশিয়ারার পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১৫১ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, মৌলভীবাজার জেলার বন্যা কবলিত কুলাউড়া জুড়ি ও বড়লেখার হাওর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে এখনো পানিবন্দি আছেন কয়েক হাজার মানুষ।

সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিলেটের ৯৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। সাত লাখের বেশি মানুষ বন্যা দুর্গত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়ে ছয়শোটি আশ্রয়কেন্দ্র বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আট হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

news24bd.tv/FA