<p><strong>ছাত্র ব্যতীত সবাই আছেন ছাত্রদলের কমিটিতে</strong></p>

আংশিক আবার পূর্ণাঙ্গ হয় কীভাবে, ছাত্রদল কমিটি নিয়ে দুদু

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২৫৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়েছে ১৫ জুন। পূর্ণাঙ্গ না হলেও এই কমিটিকে ‘আংশিক পূর্ণাঙ্গ’ কমিটি বলছে ছাত্রদল। তবে কমিটি একইসাথে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ কীভাবে হতে পারে সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এই কমিটি আংশিক। যাচাই বাছাই শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনকে বলেন, ১৫ জুন ছাত্রদলের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেটি মূলত আংশিক কমিটি। এর আগে আমরা যেমন আংশিক কমিটি ঘোষণার পরে নানা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তাছাড়া আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ শব্দদুটোই তো সাংঘর্ষিক। আংশিক আবার পূর্ণাঙ্গ হয় কীভাবে- প্রশ্ন রাখেন দুদু।

এছাড়া কমিটিতে বিবাহিত, অছাত্র ও বয়স্ক সদস্য থাকার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে দুদু আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ঘোষণা করা হবে। তরুণদের এই কমিটিতে বয়স্কদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাকীটা খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো।

কমিটি নিয়ে বিতর্ক কমিটি ঘোষণার পরেই সদস্যদের নিয়ে বিতর্ক ওঠে নানা মহলে। অভিযোগ রয়েছে ২৫৭ সদস্য বিশেষ কমিটিতে বেশিরভাগই অছাত্র। কমিটিতে এমন অনেকে রয়েছেন যাদের ক্লাস ও পরীক্ষার পাঠ চুকেছে আরও বছর দশেক আগে। কারও কারও রয়েছে স্ত্রী সন্তান। তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে ছবি। পুরাদস্তুর পরিবার রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে করা হয়েছে ছাত্রদলের কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের ২৫৭ সদস্যের এই কমিটির সিংহভাগই নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। এই নেতাদের বেশিরভাগ স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন এক যুগের বেশি সময় আগে। সেই হিসাবে তাদের নিয়মিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা অন্তত অর্ধযুগ আগে। বয়সে বেশির ভাগই ত্রিশোর্ধ্ব। তাছাড়া কমিটিতে থাকা প্রায় শতভাগ নেতাই পড়াশোনায় অনিয়মিত।

ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতার দাবি, বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পলাতক আসামি তারেক রহমানের একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দে বাছাই করা ছাত্রদলের কমিটির এই নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা শিক্ষার্থী কার্যক্রমের বদলে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তার প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি।

কমিটিতে বয়স্কদের সমাহার ১৫ জুন ঘোষিত 'আংশিক পূর্ণাঙ্গ' কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে। সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান ২০০৬-০৭, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ২০০৭-০৮, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান ২০০৯-১০, জাহাঙ্গীর আলম ২০০৭-০৮ এবং শরিফ প্রধান ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হিসেব কষলে দেখা যায় তারা ১৪ থেকে ১৭ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন৷ সাধারণ হিসাব ধরলেও তাঁদের বয়স অন্তত ৩১ থেকে ৩৪ বছর হতে পারে।

ছাত্রদলের এই আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ২১ জন নারী। ২৫৭ সদস্যের কমিটির ৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ছাত্রদলের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ আর অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমার বিষয়টি শিথিল ছিল। কমিটির তথ্যানুযায়ী, নারীদের মধ্যেও যারা কমিটিতে পদ পেয়েছেন তাদের অনেকেও স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। অনেকেই অনিয়মিত, নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্ব। কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত কোর্সে ভর্তি আছেন। নারীদের মধ্যেও কেউ কেউ অনিয়মিত কিংবা ‘ড্রপ আউট’ শিক্ষার্থী।

বিগত সময়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপকর্মের অভিযোগ। বাস-ট্রাকে অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুরসহ কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে মামলা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মতোই তার ছেলে তারেক জিয়া এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ যখন তাদের ক্যারিয়ার গড়ার সময় সেই সময় তারা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে দেশ ও নিজের ক্ষতি করছে।

অছাত্রে ভরা ছাত্রদলের এই কমিটির বিষয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরকে বার বার ফোন দিলেও তার মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বেপরোয়া ছাত্রদলের যত কর্মকাণ্ড যদিও ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও ভয়াবহ হয়ে ওঠে এই দুই সংগঠন। নির্বাচন ভণ্ডুল করতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ করে। ওইদিন নয়াপল্টনে সংঘর্ষে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ। আমিরুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন পুলিশ হত্যার পরিকল্পনা ছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত নভেম্বরে নির্বাচনের আগে সহিংসতা ছড়াতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে প্রজাপতি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মাসেই মিরপুরে বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানেও একজন ছাত্রদল কর্মী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।  তখন বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুমকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ ছাড়া সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টার সময় জামায়াতে ইসলামী সমর্থক ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।

নির্বাচনের আগে এমনসব ঘটনা দেশব্যাপী ঘটেছে অহরহ। ওই সময় দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে বাস-ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, ট্রেন লাইনে অগ্নিসংযোগসহ নানা অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

news24bd.tv/FA/IAM