যে চার বস্তু পরকালে পাপকাজের সাক্ষ্য দেবে

গোনাহ দুই প্রকার। সগিরা গোনাহ ও কবিরা গোনাহ। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যেসব কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং যেসব কাজের জন্য শাস্তির বিধান অথবা আল্লাহর ক্রোধের ঘোষণা আছে, সেগুলোকে কবিরা গোনাহ বলা হয়। এমন না হলে তাকে সগিরা গোনাহ বলা হয়।

কবিরা গোনাহ কোনো ইবাদতের দ্বারা মাফ হয় না—এর জন্য তাওবা করতে হয়। আর সগিরা গোনাহ নেক আমল দ্বারাও মাফ হয়ে যায়। তবে সগিরা গোনাহও যদি বেপরোয়া ও ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বারবার করা হয়, তাহলে তা-ও কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।  

গোনাহের প্রভাব 

গোনাহের প্রভাব হলো—তা যেকোনোভাবে গোনাহগারকে চিন্তিত ও অশান্ত করে রাখে। গোনাহ করার প্রথম পর্যায়ে অনেকে মনে করে, আজ এ গোনাহ করে ফেলি, তারপর ছেড়ে দেব। পরে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় সে গোনাহ সহজ হয়ে ওঠে না। বরং দিনদিন আরো মারাত্মক গোনাহে লিপ্ত হয়।

গোনাহ করতে করতে একপর্যায়ে গোনাহ করা অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন চাইলেও সহজে তা থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। গোনাহ ক্যান্সারের মতো। ক্যান্সার অপারেশন না করলে যেভাবে আস্তে আস্তে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি গোনাহ পরিত্যাগ না করলে তা আস্তে আস্তে সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় সব ধরনের গোনাহে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ পরিত্যাগ করো। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)

গোনাহের চার সাক্ষী

গোনাহের ওপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা চার সাক্ষী পেশ করবেন।  

প্রথম সাক্ষী : প্রত্যেক মানুষের কাঁধে ‘কিরামান কাতিবিন’ ফেরেশতা আছেন, তাঁরা সাক্ষী হবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে, যা তোমরা করো। ’ (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ১০-১২)

দ্বিতীয় সাক্ষী : আমলনামা সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে, তার কারণে আপনি অপরাধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে : হায় আফসোস! এ কেমন আমলনামা? এ যে ছোট বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি; সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৯)

তৃতীয় সাক্ষী : জমিন বা গোনাহ করার স্থান সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন সে (জমিন) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ আপনার পালন কর্তা তাকে আদেশ করবেন। ’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৪-৫)

চতুর্থ সাক্ষী : মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ২০)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)

পাপ আগুনসদৃশ

পাপ মূলত আগুন। পাপীরা অবশ্যই ইহকাল ও পরকালে পাপের আগুনে জ্বলবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং শিগগির তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা