যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছিল। আটক করা হয়েছিল অভিযুক্ত ধর্ষককে। পরে সেই অভিযুক্তের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হলো অভিযোগকারী তরুণীকে। আইনজীবী ও পুলিশই মূলত ধর্ষণের শিকার তরুণীর সঙ্গে ধর্ষক যুবকের বিয়ের আয়োজন করে।
গতকাল (৩১ আগস্ট, শুক্রবার) এমনই অবাক করা ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের (বাংলার) উত্তর ২৪ পরগণা জেলার পৌর এলাকা বনগাঁয়ে। আদালত চত্বরেই তাদের বিয়ে হয়।
লাল রঙের তাঁতের শাড়ি পরেছিলেন কনে আর পাত্রের পরনে ছিল লাল টি-শার্ট ও জিন্স। তাদের ঘিরে ছিলেন আইনজীবীরা। বিয়ের যাবতীয় আয়োজনও করেছিলেন তারাই।
কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন এমনভাবে অভিযুক্তের সঙ্গে তরুণীর বিয়ে দেওয়া হল? ওই তরুণী কি চাপে পড়ে বিয়ে করলেন?
কিন্তু পুলিশ ও আইনজীবীরা বলছেন, জনসাধারণের ধারণা ভুল। তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেছেন ওই যুবক। সে তিব্বত পুলিশের কনস্টেবল। বর্তমানে উত্তরখণ্ডে কর্মরত রয়েছে। গোপালনগরের বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল হরিণঘাটার রুস্তমপুর এলাকার বাসিন্দা ওই যুবকের।
তরুণীর দাবি, গেল বছর তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে তার প্রেমিক। মেয়েটির পরিবারের লোকজন তাকে বুঝিয়েও রাজি করাতে পারেননি। এরপরেই তরুণী বনগাঁ আদালতে প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে গোপালনগর থানা পুলিশ ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।
পরে ২০ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় যুবককে। বিচারকের নির্দেশে এতদিন কারাভোগ করেছে সে। জেলে থাকাকালীন সে ওই তরুণীকে বিয়ে করতে রাজি হয়।
এক আইনজীবী বলেন, সম্ভবত ওই যুবক বুঝতে পেরেছিল তরুণীকে বিয়ে না করলে তার চাকরি চলে যেতে পারে। সেই কারণেই হয়তো বিয়েতে রাজি হয়েছে।
বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ওই যুবক ও তরুণীর পরিবারের লোকজন তাদের কাছে জানিয়েছেন তারা দু’জনের বিয়ে দিতে চান। সেই অনুযায়ী বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়। বিচারক ওই যুবকের অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ওই যুবক জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আর কাল বিয়ের আয়োজন করা হয়।
আদালতে এমন বিয়ে দেখে মানুষের ভিড় জমে যায়। কয়েকশ মানুষ বিয়ে দেখতে জড়ো হন। অনেকে আবার মোবাইলবন্দি করেন ওই যুগলের ছবি। এক আইনজীবী মন্ত্রপাঠ করে দু’জনের বিয়ে দেন। বিয়ে শেষে মিষ্টিমুখও করানো হয়।
ওই তরুণী বলেন, ‘আজ আমি খুব খুশি। ওর ওপর অভিমান হয়েছিল। এখন আর নেই। এখন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে চাই। ’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর